আজ - মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সন্ধ্যা ৬:১২

যশোরে নতুন করে যাচাই-বছায়ের আওতায় আনা হচ্ছে ২৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে

যশোর সদর উপজেলার গেজেটভূক্ত ২৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন করে যাচাই বাছাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত যে সব মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত হয়েছেন তারা রয়েছেন এই তালিকায়। তবে, ওই তালিকার মধ্যে যাদের নাম ভারতীয় মুক্তি বার্তায় থাকবে, তাদের যাচাই করা হবে না।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় নির্দেশিত ৩৩ প্রকার প্রমাণের মধ্যে একটি প্রমাণ যথাযথ উপস্থাপন করতে পারলে তাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে ধরে নেয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ে একটি যাচাই বাছাই কমিটি করে দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি এই কার্যক্রম শুরু হবে। আর এ লক্ষে কাগজপত্রে ত্রুটি আছে এমন মুক্তিযোদ্ধাদের ‘উৎরে দেবেন’ এমন আশ্বাস দিয়ে একাধিক প্রতারক চক্র মাঠ চষছে।

যশোর জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত যেসব মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভূক্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার পক্ষে নানা তথ্য দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। ওই সময়ের মধ্যে তালিকাভূক্ত হওয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে সরাসরি নানা অভিযোগ ও অনেকের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। জামুকার চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে যশোর সদর উপজেলার গেজেটভূক্ত ২৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাই বাছাই তালিকায় আনা হচ্ছে। যশোরের জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একাধিক পত্র এসেছে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০২ সালে সরকার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অনুমোদন দেয়। একজন ডিজিও নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভাপতি স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী। এছাড়া একটি শক্তিশালী কমিটিও রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করলেও কার্যক্রম শুরু করে ২০১০ সালে। ২০১০ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভূক্ত করতে হলে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর আগে যারা গেজেটভূক্ত হয়েছেন সেই গেজেটের সাথে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের যোগসূত্রতা নেই। যে কারণে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল থেকে আপত্তি তোলা হয়। ২০১০ সালের আগের গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে যাচাই বাছাইয়ের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে যাচাইয়ে বাদ পড়ারা আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে ভাতা চালু করে আনায় বিষয়টি নিয়ে আরো জোরেসোরে মাঠে নামে জামুকা। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন করে যাচাইয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। নতুন বছরের শুরুতেই নতুন এ উদ্যোগের ব্যাপারে পত্র চলে এসেছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধার কাছে এই মেসেজ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।  এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, যাচাই বাছাই সংক্রান্তে মন্ত্রণালয় থেকে তার কার্যালয়ে একাধিক পত্র ও নির্দেশনা এসেছে। স্বচ্ছতার সাথে যাচাই কার্যক্রম এগুবে। এ ব্যাপারে কমিটির রুপরেখাও এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত বিধি মোতাবেক যাচাই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, মূলত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রস্তাবনার কারণেই নতুন করে যাচাই বাছাই শুরু হচ্ছে। তবে সংখ্যায় ২৪৯ জন হলেও যেসব মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় মুক্তি বার্তায় নাম আছে তাদের যাচাইয়ের আওতায় আনা হবে না। এ ব্যাপারে কমিটিও করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে থেকে একজনকে সভাপতি মনোনীত করে  নাম দেবে যাচাই বাছাই কমিটিতে। এছাড়া ৩৩ প্রকার প্রমাণের মধ্যে একটি স্বচ্ছতার সাথে উপস্থাপন করতে পারলে সেই মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকৃত বলে ধরে নেয়া হবে এমন নির্দেশনা এসেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে। সব মিলিয়ে আগামী ৩০ জানুয়ারি কার্যক্রম শুরু হবে। একদিনে শেষ না হলে ৩১ জানুয়ারি যাচাইয়ের কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার রাজেক আহমেদ গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, মূলত যশোরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলে যে সব সময়ে নমিনেটেড কমিটি ছিল, সেই সব কমিটির সময়ে অনেকে মুক্তিযোদ্ধারা গেজেটভূক্ত হয়েছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল তাদের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত যশোরে যারা গেজেটভূক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১শ’৭০ জনের মত ভূয়া হতে পারে। আবার এই ২৪৯ জনের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যাদেরকে যাচাই বাছাই আওতায় আনা হাস্যকর হয়েছে। রণাঙ্গণের অনেক বীরের নামও এসেছে ওই তালিকায়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচিত সাবেক কমান্ডার মাজহারুল ইসলাম মন্টুর নামও এসেছে ওই তালিকায়। যাহোক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা গেজেটভূক্ত থাকুক এবং অমুক্তিযোদ্ধারা বাদ পড়ুক এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ২৪৯ জনের মধ্যে এই তালিকায় ২০১৭ সালের যাচাই বাছাইয়ে যে ৬১ জন অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন তারাও রয়েছেন।
এদিকে, অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই পত্র যশোরে আসার পর একটি প্রতারক চক্র মাঠে নেমেছে। কাগজপত্রে ত্রুটি আছে এমন মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করছে ওই চক্রটি। এছাড়া যশোর শহরের দড়াটানা এলাকার একটি হোটেলে বসে দুটি চক্র মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে এনে অর্থ বাণিজ্য করছে। জামুকা ও যাচাই বাছাই কমিটি ম্যানেজ করার কথা বলে তারা মিথ্যাচার করছে। আর হাতিয়ে নিচ্ছে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। মিথ্যা স্বাক্ষী দিলে ছয় মাসের ভাতা বন্ধ হওয়ার তথ্যে তারা ভয় দেখাচ্ছে। স্বাক্ষী দিয়ে দেয়ার কথা বলেও টাকা হাতানো হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

আরো সংবাদ