আজ - মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ১১:০১

দেশে ফিরেও নিজের ঘরে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না ৩৭৮ বাংলাদেশি

সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরেও নিজের ঘরে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না বাংলাদেশের ৩৭৮ নাগরিক। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকায় যশোরের হোটেলেই ঈদ উদযাপন করতে হবে তাদের।

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে দেশে ফেরার পর ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদের। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির অংশ হিসেবে তারা ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন হোটেলগুলোতে অবস্থান করছেন। জেলা প্রশাসন ঈদের দিন তাদের সেমাই, পোলাও, মাংসসহ উন্নত খাবার সরবরাহ করবে।

যশোরের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ মে এবং পরবর্তীতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফেরা বাংলাদেশের নাগরিকদের ঈদের দিন হোটেলেই থাকতে হবে। আর ৩০ এপ্রিল দেশে ফেরত আসাদের কোয়ারেন্টিন শেষ হবে ঈদের দিন ১৪ মে। ঈদের দিনই ছুটি মিলবে ১০১ জনের। এখন পর্যন্ত আসা যাত্রীদের হিসেবে ঈদের দিন হোটেলে ৩৮০ জনের থাকার কথা থাকলেও দুজন কমে ৩৭৮ জন হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন নারায়ণগঞ্জের গৃহবধূ আম্বিয়া খাতুন (৩৩) বুধবার রাত ১০টার দিকে যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আম্বিয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল আওয়ালকে স্ত্রীর লাশের সাথে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এজন্য সংখ্যায় দুজন কমেছে।

যশোরের জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত ১৫ দিনে (২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে) পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে ২ হাজার ৬৯৯ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী। এদের মধ্যে যশোর জেলায় অবস্থান করছে এক হাজার ১৮১ জন। এরমধ্যে যশোর শহরের বিভিন্ন হোটেলে ৪৬৭ জন, বেনাপোলে হোটেলে ৪৩৮ জন, ঝিকরগাছার গাজীর দরগা মাদরাসায় ১৪০ জন, যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ১০১ জন, অন্যান্য ক্লিনিক ৩ জন ও যশোর জেনারেল হাসপাতাল করোনা ইউনিটে পজিটিভ ১৩ জনসহ ৩২ জনকে রাখা হয়েছে।

ভারত ফেরত রোগীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য যশোর জেলায় ২৯টি হোটেল রিকুইজিশন করেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে শহরের ১৬টি হোটেল রয়েছে। এগুলো হলো: যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের থ্রি-স্টার মানের আবাসিক, হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ওরিয়ন, হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সিটি প্লাজা, হোটেল ম্যাগপাই, হোটেল আরএস, হোটেল মণিহার, হোটেল সোনালী, হোটেল শাহরিয়ার, হোটেল সিটি, হোটেল বলাকা, হোটেল নয়ন, হোটেল নিউওয়ে, হোটেল ম্যাক্স, হোটেল প্রিন্স।

এছাড়াও বেনাপোলে নেয়া হয়েছে আরও ১৩টি হোটেল। এগুলো হলো: রজনীগন্ধা, পোর্টভিউ, অ্যারিস্টোকেট, জুয়েল আবাসিক, চৌধুরী হোটেল, নিশাদ হোটেল, ফ্রেশ হোটেল, নাহিদ হোটেল, হোটেল সানসিটি, মৌ হোটেল, হোটেল সিটি, বেনাপোল পর্যটন ও রহমানিয়া হোটেল। পাশাপাশি রয়েছে ঝিকরগাছার গাজীর দরগাহ মাদরাসা।

সূত্র আরও জানায়, গত ৩০ এপ্রিল বিশেষ অনুমতি নিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করা পাসপোর্টযাত্রীদের মধ্যে ৫৯ জন যশোরের হোটেলে, ২৬ জন বেনাপোলের হোটেলে এবং ১৪ জন গাজীর দরগাহ মাদরাসায় রয়েছেন। ১৪ মে ঈদের দিন সকালে তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পাবেন।

যশোরের জাবির হোটেল, হোটেল হাসান ও ওরিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন অতিবাহিত করতে হবে। ফলে ঈদের আগে যাদের কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন না হবে, তাদের ঈদ হোটেলেই কাটাতে হবে।

যশোরের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ১ মে বা তার পরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের মধ্যে যারা হোটেলে কোয়ারেন্টিনে আছেন; তাদের ঈদ হোটেলেই উদযাপন করতে হবে। তাদের নিজেদের, স্বজনদের এবং মানুষ ও দেশের প্রয়োজনেই ঈদের দিনও তাদের হোটেলে থাকতে হবে। শুধু তারা নয়, কোয়ারেন্টিন বা করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশিষ্ট কর্তকর্তা, কর্মচারীদেরও কিন্তু বাইরেই ঈদ করতে হবে। ফলে কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন, সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরে গেলে পরের ঈদ স্বজনদের সাথে উদযাপন করতে পারবেন।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্টযাত্রীদের জন্য ঈদের দিন সেমাই, পোলাও, মাংসসহ উন্নতমানের খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কোয়ারেন্টিনে থাকা বাংলাদেশিদের এই খাবার সরবরাহ করা হবে।

নাস্তার মেন্যু: হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা পাসপোর্টযাত্রীদের জন্য ঈদের দিন সকালের নাস্তার মেন্যুতে থাকছে ২টি করে পরাটা, ৫টি সবজি দিয়ে তৈরি ভাজি, ডিম মামলেট, সেমাই (সকল উপকরণসহ বনফুল লাচ্ছা- যা আলাদাভাবে ফালুদার কাপে দেয়া হবে।)

লাঞ্চের মেন্যু: পোলাও, মুরগির মাংস (একটি সোনালী মুরগি ৪ পিস হবে), খাসির মাংস ২ পিস, ডিম ও চাইনিজ সবজি।

চিত্রা মোড়ের হোটেল নিউ স্টার ও রবীন্দ্রনাথ সড়কের হোটেল আল মদিনা থেকে এসব খাবার সরবরাহ করা হবে। জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারি কমিশনার মইনুল ইসলাম ও আবু নাসির খাবার মনিটরিং-এর দায়িত্ব পালন করবেন। কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সাথে ঈদের দিন হোটেলে দায়িত্ব পালনরত ট্যাগ অফিসাররাও এই খাবার গ্রহণ করবেন।

এদিকে ঝিকরগাছার গাজীর দরগা মাদরাসায় বেশ কিছুদিন তিনবেলা খাবার সরবরাহ করছে ডিভাইন গ্রুপ। ঈদের দিনও তারা সেখানকার সবাইকে আপ্যায়িত করবে। বেনাপোলের হোটেলে অবস্থানরত ভারত ফেরত যাত্রীদের সংসদ সদস্য ও মেয়র ঈদের দিন সকাল, দুপুর ও রাতে উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করবেন।

আরো সংবাদ