আজ - শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ৭:৫৪

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি সমার্থক শব্দ: জাহিদ হোসেন মিলন।

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ইত্যাদি প্রত্যেকটি শব্দ আজ সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি খুবই নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। তার মধ্যে প্রথম শব্দ বঙ্গবন্ধুই অন্য সবগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। কিন্তু পার্থিব জগৎ থেকে তাঁর দেহর বিদায় হলেও মুছে দিতে পারেনি চেতনা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং হৃদয় বিদারক গান রচিত হয়েছে। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই…’ এমন আশাবাদী করুণ আকুতির গানও রচিত হয়েছে আমাদের প্রিয় জাতির পিতাকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে গেলে এক ধরনের আবেগ মনের মধ্যে কাজ করে। এত বিশাল ব্যক্তিত্বের, কর্মযজ্ঞের, নেতৃত্বের, যুগান্তরের ইতিহাস সৃষ্টিকারী একজন মানুষকে নিয়ে লেখার সময় সে জন্য শুধু মনে হয় তাঁর কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা নিয়ে লিখি। আর ১৫ আগস্ট এমন একটি মানুষের পার্থিব ইহ জীবনের যবনিকাপাত ঘটবে তা কেউ কোনো দিন কল্পনা কিংবা চিন্তাও করেনি।

এবার ২০১৯ সালে প্রতিবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের তরফে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তরফ থেকে শোকের আগস্ট মাসে মাসব্যাপী তাঁর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। আমি আজকে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রধানত দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তার মধ্যে একটি হলো- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এই দেশমাতৃকার জন্য কী করেছিলেন এবং দ্বিতীয়টি হলো এ দেশে যদি ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য সে ঘটনাটি না ঘটত তাহলে বাংলাদেশের কী হতো।

 প্রথম বিষয়টি এত বিশাল যে, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা কঠিন। তারপরও শুধু প্রেক্ষাপটটিই একটু তুলে ধরছি। বঙ্গবন্ধু এ ভূখণ্ডে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা কোনো নেতা নন। তিনি যে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, দেশবন্ধু, বাংলাদেশের স্রষ্টা, স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা ইত্যাদি কত অভিধাতেই না তাঁকে ডাকা হয়। কারণ এগুলো কেউ তাঁকে সেধে সেধে দেয়নি। প্রত্যেকটি তিনি নিজে তাঁর জীবন দিয়ে অর্জন করেছিলেন। মোট কথা হলো তিনি আজন্মাই পুরাদস্তুর একজন মজলুম জননেতা হয়ে উঠছিলেন। কী তাঁর গ্রামের স্কুলে পড়াকালীন, কী পড়াশোনায়, কী খেলাধুলা করার সময়, কী ছাত্র রাজনীতি করার সময়, কী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ গঠন করে সাংগঠনিক পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে- এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি কাজ করেননি। প্রতিটি কাজেই তিনি সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন। এক সময় ব্রিটিশ শাসিত সর্বভারতীয় উপমহাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতাদের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন এবং একসময় রাজনৈতিক দৌড়ে তিনি সবার থেকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, আ স ম আব্দুর রব, শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাহজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুছ মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখসহ আরো অনেক সরাসরি রাজনৈতিক ভাবশিষ্য তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন। তাদের সঙ্গে নিয়েই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন।

১৭৫৭ সালে পলাশী প্রান্তরে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইংরেজ লর্ড ক্লাইভের বাহিনীর সঙ্গে এদেশীয় দোসর মীর জাফর আলীর বেঈমানির কারণে সিরাজউদ্দৌলা পরাজয়বরণ করেছিলেন। তখন থেকেই পাক-ভারত উপমহাদেশ ইংরেজ শাসনের দখলে চলে যায়। তারপর প্রায় ২০০ বছর ইংরেজ বেনিয়াদের শাসন-শোষণের ফলে দীর্ঘদিন ধরে সামন্তবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়ার জন্য বিচ্ছিন্ন আন্দোলন হতে থাকে। সেসব আন্দোলনকে দমন করার অংশ হিসেবে ইংরেজরাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করেছে। আশ্রয় নিয়েছে অনেক কৌশলেরও। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ শুরু হয়। পরে আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তখন কিছু আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সালে আবার সেই বঙ্গবঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই মুসলিম লীগ ১৯৪৯ সালে হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ যার একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিব। অতঃপর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুবশাহীর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্রের জন্য ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি ১৯৭১ সালের নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি কাজের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ছিল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের যোগ্যতাবলে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে একটি ধর্মরিপেক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পান এবং ১৯৫৭ সালে তিনিই দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দলে কাজ করার জন্য তিনিই ইতিহাসের সেই ব্যক্তি যিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর ভেতরেই ১৯৬৬ সালে তিনি আবার দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৬-তে ঐতিহাসিক ছয়দফা ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালির স্বাধীনতা

ইতিহাসে সেই ছয়দফাই হলো প্রকৃতপক্ষে বাংলার মুক্তির সনদ। মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং দিকনির্দেশনামূলকভাবে আকার-ইঙ্গিতে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণের কারণে সারা বিশ্বে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি (পয়েট অব পলিটিকস) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর পরে তাঁর কারারুদ্ধ হওয়া, নয় মাস তাঁর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলা, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ দেশ স্বাধীন হওয়া, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তাঁর স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন- ইত্যাদি ঘটনা পরম্পরা বাঙালি মাত্রই জানা। কিন্তু আড়ালে-আবডালে প্রকৃত ঘটনা ঘটতে থাকে এরপর থেকে। তিনি সদ্য স্বাধীন হওয়া তাঁর প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসার দেশটিতে ফিরে এসেই আবার সবাইকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দিয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান। দেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারত-রাশিয়াসহ অনেক দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে ঠিকই কিন্তু তখনো ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্থলসীমায় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তিনি সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যহারের বিয়য়ে অনুরোধ করেছিলেন। তখন বিশ্বনেতারা শেখ মুজিবের সাহসের তারিফ করেছেন। আর সেই থেকেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে থাকতে হয়নি। সবাই লৌহমানবসম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তখন বিশ্বনেতৃত্ব বাংলাদেশে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর নিজের একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমরা যদি কোনো ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিই, তখন সেইসঙ্গে তাকে একটি গলাধাক্কাও দিই। অর্থাৎ কারো কাছে ভিক্ষুকের কোনো মর্যাদা থাকে না। সে রকম একটি দেশের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। কাজেই আমরা বিশ্বে আমাদের দেশকে সাহায্য চেয়ে চেয়ে ভিক্ষুকের জাতিতে রূপান্তর করতে পারি না, আর আমি নিজেও কোনো ভিক্ষুক দেশের নেতা হয়ে থাকতে চাই না।’ সবাইকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য কৃষি কাজে, শিল্পে-কল-কারখানায়, শিল্প, সংস্কৃতি-সাহিত্যে, শ্রমজীবী থেকে বৃদ্ধিজীবী সবাইকে যার যার কাজে সফলভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পাশাপাশি একটি দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ দিতে চেয়েছিলেন দেশবাসীকে। সেটির প্রমাণ, তিনি তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে প্রত্যেকটি স্থানে স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন সফলভাবে। তিনি দেশের জন্য রাতে-দিনে কাজ করতে করতে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি কখনো তাঁকে চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বলন করতে বলতেন, তখন তিনি রাগ করে বলতেন- ‘এ দেশে আমাকে কেউ মারতে আসবে না’। তাঁর কঠিন আত্মবিশ্বাসের কারণে তিনি রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে না থেকে তাঁর নিজের বাড়ি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরেই থাকতেন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত প্রতিবিপ্লবী শক্তিরা তো বসে থাকেনি। তারা যথারীতি নীরবে-নিভৃতে ঘাপটি মেরে থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলেই মনে করা হয়।

পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে পড়ে তথাকথিত সুবিধাবঞ্চিতরা সব একাট্টা হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ইতিহাসের সেই ঘৃণ্য ঘটনাটি ঘটানোর সাহস করে। সেদিন যে সেখানে শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেছিল তাই নয়, হত্যা করা হয়েছিল তাঁর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও মাত্র ১১ বছর বয়সের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকে। হত্যা করেছিল ছেলের বউ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম আরজু মনি, সুকান্ত বাবু, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলসহ আরো অনেককে। তখন শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার উচ্চশিক্ষার্থে জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান বাংলাদেশের সফল ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যতম সমাজসেবী শেখ রেহানা।

এখন আসা যাক যদি এ দেশে ১৫ আগস্টের মতো একটি ঘৃণ্য ঘটনা না ঘটত তাহলে কী হতো। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে পরিচালিত স্থিতিশীল সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে প্রভূত উন্নতির কথা জানি। বাংলাদেশ সৃষ্টির মাত্র সাড়ে তিন বছরে সেনা-বিমান-নৌবাহিনীর পুনর্গঠন, পুলিশ, বিডিআর পুনর্গঠন ও প্রতিষ্ঠাসহ প্রত্যেকটি নিরাপত্তা ও সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিজের কাঁধে নিয়ে সামনের দিকে এগোনোর জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে গেছেন। সেই ধারা অব্যাহত থাকলে স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পরে তাঁরই কন্যার আন্তরিকতায় আজকে দেশের অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা হতে এত দিন সময় লাগত না। দেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমাদের এত দিন অপেক্ষা করতে হতো না। এখানে একটি বিষয়কে সব সময় অপপ্রচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু নাকি যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদের বিচারের পথ রুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু এটি নেহাতই একটি অপপ্রচার। কারণ বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেছিলেন যারা না বুঝে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশের বিরোধিতা করেছিলেন শুধু তাদের। তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী এমন কাউকেই ক্ষমা করেননি। বরং তিনি এগুলো অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া শুরুও করেছিলেন। ১৫ আগস্ট না ঘটলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অপরজন শেখ রেহানাকে কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে থাকতে হতো না। বিশ্ব দরবারে বহু আগেই আমরা একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিগণিত হতে পারতাম। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তার সবটুকুতেই তারা সফলতা অর্জন করতে পারেনি। তাই হয়তো দেশবাসীর সৌভাগ্যের কারণেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টসহ এ পর্যন্ত প্রায় ২১ বার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখানো থেমে নেই। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। কারণ তিনি আবার বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনার জীবন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন যা নিয়ে দেশের স্বার্থেই আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকার প্রয়োজন। এ সতর্কতা ও প্রতিরোধ শক্তি অর্জনই হোক এবারের শোকের আগস্টের আরেক শপথ।

জাহিদ হোসেন মিলন,
প্রচার সম্পাদক
যশোর জেলা যুবলীগ

আরো সংবাদ