আজ - বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - রাত ১১:০১

মণিরামপুরে নিয়ম মেনে অফিসে আসেন না কর্মকর্তারা

মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিময় মেনে অফিসে না আসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে নানা অজুহাত তারা সকাল নয়টার অনেক পরে অফিসে ঢোকেন। অনেকে আবার অফিস ছাড়েন বিকেল পাঁচটার আগে। অথচ সেবাগ্রহিতার অফিসে গেলে তাদের জানানো হয় কর্মকর্তারা দপ্তরের কাজে বাইরে রয়েছেন।  
বুধবার (৬ জানুয়ারি) সরেজমিন সকাল নয়টা সাত মিনিট থেকে নয়টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সব দপ্তর ঘুরে কোনো কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো দপ্তরে অফিস খুলে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে। আবার কিছু দপ্তরের প্রধান ফটকে বা দপ্তর প্রধানের কক্ষের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। তবে ওই সময় বিএডিসি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সন্তু সাহাকে অফিসে বসে কাজ করতে দেখা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ দপ্তরের কর্মকর্তারা দশটার পরে অফিসে আসেন। যদিও নীতিমালায় রয়েছে, অফিসের কর্তারা সকাল নয়টার মধ্যে অফিসে আসবেন। তারপর কাজ থাকলে বাইরে যাবেন।
সকাল নয়টা সাত মিনিটে দেখা গেছে, কৃষি কর্মকর্তা হীরককুমার সরকারের কক্ষের দরজা খোলা, তিনি নেই। নয়টা আট মিনিটে দেখা গেছে, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তারের কক্ষের তালা খোলা দরজা বন্ধ, ভেতরে তিনি নেই। এরপর সাংবাদিক দেখে তার অফিসের পিওন তড়িঘড়ি কক্ষের দরজা খুলে ভেতরে ফ্যান ছেড়ে দেন। নয়টা ৩৮ মিনিটে ফের ওই দপ্তরে গিয়েও মৌসুমী আক্তারের দেখা মেলেনি।  
নয়টা দশ মিনিটে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রকাশচন্দ্র সরকারের দপ্তর খোলা থাকলেও ভেতরে তাকে পাওয়া যায়নি। বারান্দায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দেখা গেছে। নয়টা ১৫ মিনিটে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব দত্তর কক্ষের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। ওই সময় তালা ঝুলছিল পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ও আনসার ভিডিপি অফিসের প্রধান ফারুক হোসেনের দপ্তরেও। নয়টা ১৭ মিনিটে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দপ্তর খোলা থাকলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। নয়টা ২১ মিনিটে উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হকের কক্ষ খোলা থাকলেও তিনি অফিসে ছিলেন না। ওই সময়ে পিআইও অফিসেও কাউকে পাওয়া যায়নি। কক্ষগুলো তালাবদ্ধ ছিল। নয়টা ২৫ মিনিটে সমাজসেবা অফিসে এমএলএসএস রুমাকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। নয়টা ২৬ মিনিটে নির্বাচন অফিসের প্রধান ফটকে এবং নয়টা ৩৩ মিনিটে একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
নয়টা ২৭ মিনিটে উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী বিএম আজাদ হাসান ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। নয়টা ২৯ মিনিটে দেখা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দুইজন পিওন ছাড়া কেউ আসেননি। ওইসময় পাওয়া যায়নি সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ইব্রাহীম মিয়া, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সুধাংশু দাস ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামনু হোসেন খানকেও।
অফিসপাড়া ঘুরে এসে পরে ফোনে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশচন্দ্র, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহিদুর রহমান, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাতাবুল আলম যশোর অফিসে আছেন অথবা যাচ্ছেন। আর উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক সাইট দেখতে গেছেন এবং শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌস অফিসের উদ্দেশে বেরিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কর্মকর্তার সবাই যশোর থেকে এসে অফিস করেন।
নয়টা ৫০ মিনিটে কথা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি তখনও বাসায় ছিলেন। আর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার জানান, তিনি নয়টা দশ মিনিটের পরে উপজেলা চত্বরের কোয়ার্টার থেকে বেরিয়েছেন। পিআইও আব্দুল্লাহ বায়েজিদ বলেন, ‘সকাল আটটায় কর্মসূচির কাজ দেখতে রোহিতা ইউনিয়নে গিয়েছিলাম। আর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পজীক), বিআরডিবি সরদার আব্দুর সবুর দুই দিনের ছুটিতে আছেন।’
জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সবাই যেন আগামীকাল থেকে নয়টার মধ্যে অফিসে হাজির হন। কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র – সুবর্ণভূমি

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত