ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আজ রোববার হেফাজতে ইসলামের হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সরাইলে পুরো সড়ক–মহাসড়ক সকাল থেকেই হরতাল–সমর্থক হেফাজতের কর্মী ও তাঁদের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। লাঠিসোঁটা হাতে তাঁরা অবস্থান নিয়ে আছেন।
নিহত দুজনের একজন হলেন সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিহাতা গ্রামের হাদিস মিয়া ওরফে কালন মিয়া (২৩)। তাঁর বাবার নাম আলতাব আলী ওরফে আলতু মিয়া।
নিহত ব্যক্তির বড় ভাই মাওলানা আবদুর রহিম (৩৮) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। লাশ আমাদের বাড়িতে আছে।’
নিহত আরেকজন হলো উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের সুফি আলীর ছেলে আল আমীন (১২)। আহত অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার আধা ঘণ্টা পর সে মারা যায়। কুট্টাপাড়া গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদেক মিয়া ও প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক আল এমরান এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রানা নুরুশামস হাসপাতালে শিশু আল আমীনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
একই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত আলী দুজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তরুণের লাশ তাঁর স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। আর হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়।
সংঘর্ষের খবর জানালেও তাতে কারো মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ কিংবা প্রশাসন কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হরতাল–সমর্থকেরা। তাঁরা থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরাইল উপজেলায় উত্তপ্ত অবস্থা থাকলেও মহাসড়ক ছাড়া কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হাইওয়ে থানায় হামলায় অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সেখানকার পুরো তথ্য এখনো জানা যায়নি।’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ আছে।
সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, সরাইল বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, বারিউড়া, শাহবাজপুর, বেড়তলা এবং সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া মোড় কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় কয়েক হাজার মাদ্রাসাশিক্ষার্থী ও অন্য লোকজন লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান করছেন। এসব সড়কের কিছুদূর পরপর গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা ফেলে এবং টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হরতাল–সমর্থকেরা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সাঁটানো বিভিন্ন ব্যানার–ফেস্টুন ভাঙচুর করেন।