আজ - বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ৪:০২

পূর্ণ দায়িত্বে পূর্ণ মেয়াদ পার করবেন জয়-লেখক

এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন আল নাহিয়ান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। মাস তিনেক পরই দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে ভারমুক্ত হন তারা। পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর এরই মধ্যে একবছর সময় পার করেছেন এই দুই ছাত্রলীগ নেতা। এই একবছরে ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতির ধারা অব্যাহত রেখে ছাত্রলীগকে একতাবদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে গেছেন— এমন মূল্যায়ন ছাত্রলীগের ভেতরে যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মূল সংগঠনেও। তাই তারা ভারমুক্ত হওয়ার দিন থেকে শুরু করে দুই বছরের পূর্ণ মেয়াদেই দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ আরও একবছর ছাত্রলীগের কাণ্ডারি থাকছেন এই জয়-লেখক।

ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের ভূমিকায় সন্তুষ্ট। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের প্রশংসাও করেছেন তিনি। সব মিলিয়েই দুই বছরের পূর্ণ মেয়াদ পাচ্ছেন জয়-লেখক। গত একবছরে সংগঠনে বিভিন্ন অভিযোগের কারণে যেসব পদ শূন্য হয়েছে, সেগুলোও দ্রুত পূরণ করে তারা কমিটির কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

গত ৪ জানুয়ারি ছিল ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সংগঠনের ৭৪ বছরে পা রাখার এই দিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে তিনি জয়-লেখক নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের প্রশংসা করে বলেন, আমি সত্যি গর্বিত ছাত্রলীগকে নিয়ে। যখন আহ্বান করলাম, আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেরা নেমে পড়ল ধান কাটতে। আমাদের কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগ— তারাও মাঠে নেমেছে। কিন্তু পথ দেখিয়েছে ছাত্রলীগই। আর এজন্যই ছাত্রলীগ বয়সেও আওয়ামী লীগ থেকে বড়। যখনি যে কথা বলেছি, তোমরা সে কথা শুনছ। তোমাদের আন্তরিক দোয়া, আশীর্বাদ ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এর আগে, ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১ নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান জয় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তিন মাস পর, গত বছরের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানে ভারমুক্ত করা হয় জয়-লেখককে।

ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিন মাসের মাথায়ই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারিতে পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও একবছর দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। মূলত জয়-লেখক ভারমুক্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তাতে করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হয় সবাইকে। করোনা সংক্রমণের কারণে ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হলে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা শুরু হয়। তবে জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন করতে পারেনি ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিমাসে একবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক করার বিধান থাকলেও সেটিও করতে পারেনি তারা। তবে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতার সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা-উপজেলা সম্মেলন, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই-বাছাই, কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ।

এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের সময়ই সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে দায়িত্ব পালন করে বাহবা কুড়ায় ছাত্রলীগ। সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও মানবিক সহায়তায় যুক্ত হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তার প্রশংসা শেখ হাসিনা নিজেই করেছেন বিভিন্ন সময়। ফলে জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন কমিটি নিয়ে একটি ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে।

তবে ঢাকায় বসে প্রেস রিলিজভিত্তিক কমিটি গঠনকে ভালো চোখে দেখছে না সংগঠনে যুক্ত অনেকেই। বিশেষ করে যারা আগামীতে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী, তাদের একটি অংশ জয় ও লেখকের ইতিবাচক নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রক্রিয়া হিসাবে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে। তবে এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই জয়-লেখকের। তারা অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংগ্রামের অনবদ্য পথচলায় ইতিবাচকভাবে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিতে চান। আর নির্দেশ পেলেই সম্মেলন করবেন— এমন প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের যে চার কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্রলীগের দেখভাল করেন, তাদের একজন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলনের বিষয়টি এখন আমাদের মাথায় নেই। ছাত্রলীগ যে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে তাদের সাধুবাদ জানানো হয়েছে। আপাতত ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আমরা কোনো ইঙ্গিত পাইনি।

জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নানক বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ তো বলা যাবে না। কারণ আগের দু’জনকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিল। পরে তাদের পূর্ণ দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকে যদি সময় দেন, তাহলে কিন্তু তাদের সময় আছে।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা আমাদের দৃষ্টিতে ভালো কাজ করছে। করোনার মধ্যে মানবিক সহায়তার সময় ভালো কাজ করেছে। ভাস্কর্য নিয়ে উগ্র মোলবাদীদের যে আস্ফালন, তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সুন্দর দায়িত্ব পালন করছে। ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে দায়িত্ব পালন করেছে। কাজেই এখন পর্যন্ত আমাদের ওপর নেত্রীর নির্দেশনা— তাদের (জয়-লেখক) দিয়ে সংগঠনটিকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে, একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা হোক। যে কারণে আমরা তাদের তাগিদ দিচ্ছি জেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার। অনেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি অনেক বছর হয়ে গেছে। এ ধরনের কমিটিগুলোকে পূর্ণাঙ্গ করতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পেয়েছি। গত বছরের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক, আমাদের প্রাণপ্রিয় আপা (শেখ হাসিনা) আমাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন। সেই দায়িত্বের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যে অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাসহ প্রত্যেকে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

জয় আরও বলেন, আমাদের একমাত্র নেত্রী ছাত্রলীগকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সম্মেলনের বিষয়টিও তিনি নিজেই দেখেন। ছাত্রলীগের যদি সম্মেলন হয়, সে সম্মেলনে তিনিই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। ফলে তিনি নির্দেশনা দেবেন, কবে সম্মেলন হবে। আমাদের দায়িত্ব হলো সংগঠনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই দায়িত্ব আমরা পালন করছি। নেত্রী নির্দেশনা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনের জন্য কাজ শুরু করব।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটি জয়-লেখকের সাংগঠনিক ব্যর্থতা কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বিতর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করা। আমরা আসার পর ৩২ জনকে অব্যাহতি দিয়েছিলাম, যা এর আগে ইতিহাসে কেউ করতে পারেনি। আমরা সেই কঠিন কাজটিও করেছি। আমাদের পরের চ্যালেঞ্জ ছিল সেই শূন্য জায়গায় যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসা। আমাদের কমিটি ৩০১ সদস্যের। সেখানে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আছেন ৫০ লাখ। তাই এখানে সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব না এবং সবার মন খুশি রাখাও অনেক কঠিন বিষয়। তারপরও আমরা যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে এই জায়গাগুলো পূরণের চেষ্টা করি।

তিনি আরও বলেন, শূন্যপদ পূরণের যে কাজটি, সেটির মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। কয়েকটি বিষয় নিয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে। সেই যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা শূন্য পদগুলো পূরণের বিষয়টি তুলে ধরব। সেটি একসপ্তাহের মধ্যেও হয়ে যেতে পারে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রেস রিলিজ দিয়ে কমিটি ঘোষণাকে কেউ কেউ ভালো চোখে দেখেননি— এ বিষয়ে জয় বলেন, সারাদেশে তখন আতঙ্কজনক পরিস্থিতি ছিল। সেখানেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কিন্তু কাজ করেছে। এখন আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাখছি। যেসব জায়গায় আমাদের কমিটিগুলো অনেক পুরনো তথা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, সেই কমিটিগুলো আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে দেবো। এর মধ্যে বেশকিছু জেলা কমিটি করেছিও। তাছাড়া কোভিডের সময় নেত্রীর নির্দেশে মানবিক কর্মকাণ্ডে জোর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বলব, আমরা ঠিক পথেই রয়েছি। আশা করছি জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য আলোকবর্তিতা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত