আজ - মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (শরৎকাল), সময় - সকাল ১১:১৮

কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই


মুনতাসির মামুন : বাংলাদেশে ডাউনলিংক করে সম্প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলে কোনও ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। এটা সরকারের জারি করা আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কিন্তু আইন তার জায়গায় সীমাবদ্ধ আছে। তা মানার কোনও বালাই দেখা যাচ্ছে না। যেন কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।     সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিষয়টি স্পষ্ট জানালেও তা এক তরফাভাবে প্রচারিত হচ্ছে কিছু মিডিয়ায়। বলা হচ্ছে, শুধু দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।অথচ তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিদেশি কোনও চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আগামী ১ এপ্রিলের পর থেকে কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করে, তবে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে আইনে স্পষ্ট জানানো আছে। কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থন্বেষী মহল তা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সরকারের এ নির্দেশনা তোয়াক্কা করছে না।ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর ধারা ৯ -এর ১৩ নং উপধারায় বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের পরিষ্কার উল্লেখ করা এই নীতি ২০০৬ ও পরে ২০১০ সালে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।যেখানে স্পষ্ট বলা হয়,বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনে বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।এই আইন  ভঙ্গ করলে ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এমনকি দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির জেল-জরিমানাও হতে পারে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।আইন অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনও অপরাধ করেন, তবে তিনি অনধিক ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা কিন্তু অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।পুনরায় একই অপরাধ করলে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা কিন্তু অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।  ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন-ইমা’র নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোন চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না- এটা দুই বছর আগের পরিপত্র। এই নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য সম্প্রতি আবারও বলা হয়েছে।তবে কিছু মিডিয়ায় এটাকে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। আইনে ডাউনলিংকপূর্বক বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের বিষয় উল্লেখ থাকলেও শুধু দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধের কথা প্রচার করা হচ্ছে। আর এটা যদি হয়,তবে বাংলাদেশের সম্প্রচার খাত খুব বেশি লাভবান হবে না।তারা আরও বলছেন,বাংলাদেশে ডাউনলিংক ওয়েতে যেসব বিদেশি চ্যানেল দেখানো হচ্ছে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। কিছু বহুজাতিক কোম্পানি যদি এখন বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতীয় বা অন্য দেশের বিজ্ঞাপন চালু করে দেয়, তবে বাংলাদেশের মিডিয়াতে তারা যে বিজ্ঞাপন দিতো সেটা আর দিবে না। কারণ, বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে তো তারা ভোক্তা পেয়েই যাচ্ছে। ফলে সরকারের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে এ খাত তেমন লাভবান হতে পারছে না বা পারবে না। বরং বলা যায়, যে লাউ সেই কদু অবস্থা। বাংলাদেশের দর্শকরা ফি দিয়ে বিদেশি চ্যানেল দেখুক, সেখানে কোনও বাধা নেই। কিন্তু তারা বিজ্ঞাপনহীন (ক্লিনফিড) দেখুক।বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনের পুরোপুরি প্রয়োগের অভাবেই সেটা হচ্ছে না। সরকার তথা বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়; যাদের এটা দেখভাল করার কথা, তারা নিরব ভুমিকা পালন করছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এতে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পড়ছে, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারতাই সরকারের আইন যদি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হয়, তবে এই অর্থ পাচার থামবে না। এখনই উচিত হবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত