আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ১০:০০

কাশ্মীর কারাগারে জায়গা নেই। বন্দীদের রাখা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে!

একদিন না যেতেই ফের জনগণের চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। শনিবার রাতে শ্রীনগরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের পর গতকাল রোববার কর্তৃপক্ষ এ কড়াকড়ি আরোপ করে। সংঘর্ষে ২৪ বিক্ষোভকারী পুলিশের ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে কাশ্মীর অবরুদ্ধ করার পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানকার চার সহস্রাধিক বাসিন্দাকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যাজিস্ট্রেট জানান, কারাগারে আর বন্দি রাখার জায়গা নেই। তাদের কাশ্মীরের বাইরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে রাখা হচ্ছে। শনিবার থেকে জম্মু-কাশ্মীরের কিছু এলাকায় ধীরগতির ইন্টারনেট ও ল্যান্ডফোনের সংযোগ চালু করা হয়। তবে গতকাল ইন্টারনেট সংযোগ ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যেন ‘ভুয়া সংবাদ’ ছড়ানো না হয়, সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে শুধু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (পিওকে) নিয়েই আলোচনা হবে, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নয়। খবর রয়টার্স, এনডিটিভি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

কাশ্মীরে সংঘর্ষের একটি চিত্র।

বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার দিল্লির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার কাশ্মীরে পুলিশ ও জনতার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জনগণের চলাচলে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত আসার পরই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজ্য সরকার বরাবর বলে আসছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরে কোনো ধরনের কারফিউ আরোপ করা হয়নি। তবে গতকাল কাশ্মীরের সড়কগুলোতে বিপুলসংখ্যক ব্যারিকেড দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। লোকজনকে রাস্তা থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের বলতে শোনা গেছে, ‘কারফিউ চলছে। আপনারা বাড়ি ফিরে যান।’ সরকারের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শ্রীনগরে শনিবার রাতের বিক্ষোভে ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৪ বিক্ষোভকারী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে শ্রীনগরে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের প্রতিনিধি এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ বিক্ষোভের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শ্রীনগরের অন্তত ২০টির বেশি জায়গায় পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপ করেছে জনতা। কয়েকদিন ধরে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি জায়গায় শনিবার বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর মরিচের গুঁড়ার গ্রেনেড এবং ছররা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোহাম্মদ আইয়ুব নামে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মরিচের গুঁড়ার গ্রেনেড এবং টিয়ার শেলের ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন রাতেই তিনি মারা যান এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে দাফন করে ফেলা হয়।

ছবি: দ্য ডন

গতকাল হরিয়ানা রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন সামনে রেখে এক সমাবেশে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হলে সেটি শুধু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর নিয়েই হবে। এ ছাড়া কোনো ধরনের আলোচনার আগে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে আহ্বান জানান তিনি। পরিস্থিতি বুঝে পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগ হবে- শুক্রবার পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন রাজনাথ। মূলত কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরতে ইসলামাবাদ যে তৎপরতা শুরু করেছে, তারই প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গতকাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারতের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার এখন ‘ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী, হিন্দু আধিপত্যবাদী মোদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ এ বিষয়টি যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বেশ কয়েকটি পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো সংবাদ