আজ - মঙ্গলবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - রাত ৮:৫৯

পাগলা শাহিন- টিটোর সৃষ্টি এক ক্যাডারের করুণ জীবনাবসান।

** যশোর সদর -৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী খালেদুর রহমান টিটোর পোষ্য ক্যাডার ছিলেন শাহিন ।
** নিহত পাগলা শাহিনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে মাগুরায় দাফন করেছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।
** আইনি প্রক্রিয়া শেষে কবর থেকে লাশ পুণঃ উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে।

** শাহিনের মৃত্যুতে দারুন ব্যথিত সাবেক এমপি খালেদুর রহমান টিটোর ছেলে মাসুক হাসান জয়।

মুনতাসির মামুন: ২০১৪ সালের ২৫ মে রাতে যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে গুলি করে ও বোমা মেরে (১৮ জুন তিনি ঢাকার এপোলো হাসপাতালে মারা যান) হত্যার মধ্যদিয়ে আলোচনায় আসেন রামনগর গ্রামের শুকুর আলী মোল্যার ছেলে শাহিনুর রহমান ওরফে পাগলা শাহিন ওরফে পালসার শাহিন।

অন্ধকার পথের সারথী চিলেন প্রায় দুই দশক আগে থেকেই ,চুরি ছিনতাই ডকাতির মধ্যে সিমাবদ্ধ ছিল তখনকার শাহিনুর। রনজু ওরফে অরজু ডাকাতের দেহরক্ষী হিসেবে সে সময় পদোন্নতি পান তিনি।

২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলে যশোর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন পান আওয়ামী লীগের সাবেক এম. পি জনাব আলী রেজা রাজু। কিন্তু কিছু দিন পর জনাব রাজুর নমিনেশন প্রত্যাহার করে খালেদুর রহমান টিটো’কে যশোর সদর আসনে নমিনেশন দেয়া হয়। খালেদুর রহমান টিটোর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে নিজেকে তুলে ধরেন শাহিন।এর আগে তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিলোনা।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আলমগীর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শাহীন চাকলাদারের মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর দায়ে আ’লীগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সাবেক এমপি খালেদুর রহমান টিটোর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুক হাসান জয় ও তার সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা করে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে। সে সময় হত্যামিশনে অংশ নেন শাহিন হত্যামিশন পরবর্তী সময়ে এক সময়ের ছিটকে চোর বনে যান বিশাল রাজনৈকিত নেতা যদিও সাংগাঠনিক কোন পদ ছিলোনা তার।

পরবর্তীতে খালেদুর রহমান টিটো পরাজিত হলেও থেমে থাকেনি শাহিনের সন্ত্রাসের সম্রাজ্য । সন্ত্রাসী ম্যানসেল ও মাসুক হাসান জয়ের সাথে নিবিড় সাক্ষ্যতা গড়ে তুলে তার চলার পথ নির্বিঘ্ন করেন শাহিন- ফিঙ্গে লিটনের সাথে এ সময় সক্ষ্যতা গড়ে ওঠে তার ,অস্ত্রের নাগাল পেয়েও যান খুব সহজে।তারপর থেকে আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি তাকে। ভাড়াটে খুনি , সন্ত্রাসী ,চাঁদাবাজি, প্রকাশ্য ছিনতাই, মাদক ব্যবসা সব মিলিয়ে গড়ে তুলেন বিশাল কর্মী বাহিনী। এছাড়াও অনেক গৃহবধূ ধর্ষনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরূদ্ধে। তার একান্ত ক্যাডার বাহীনির মধ্যে মহব্বত, ফসিয়ার, সিদ্দিক, মিজান, শামীম,তোসির এবং ডিজে তাসকিন’রা উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই মনিরামপুর পৌর মেয়র লাভলু সমর্থিত গ্রুপের ক্যাডার। টিটোর কাছে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করতো।

রাজারহাট বাজারে বহিরাগত ট্যানারি ব্যবসায়ীরা টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি শাহিন বাহিনীর কবলে পড়ে স্বর্বস্ব খুইয়ে বাড়ী ফিরেছেন অনেক ট্যানারি ব্যবসায়ী। কোন অভিযোগ করলেই অত্যাচার, ধর্ষনের মত কর্মকান্ড ঘটে যেত ভুক্তোভূগির পরিবারের সদস্যদের সাথে। সর্বশেষ তার ক্ষপ্পরে পড়েছেন সাতক্ষীরার এক ট্যানারি ব্যবসায়ী।

স্থানীয়রা জানান, মুড়লি থেকে শুরু করে রাজারহাট বাজারের আগ পর্যন্ত যে ফাঁকা জায়গাটি রয়েছে তা রাতের আধারে দখলে চেল যেত শাহিন বাহিনীর হাতে। সকল প্রকারের ছিনতাই ও ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন রাতভর। রাজারহাট বাজারের সকল ব্যবসায়ীকে রোজ চাঁদা দিয়ে দোকান খুলতে হতো ব্যবসায়ীদের।

উল্লেখ্য রাজারহাটের হাটটি উপজেলা আ’লীগ সম্পাদক হাসানুজ্জামান হাসানের কাছে ইজারা দেয়া থাকলেও তিনি পাগলা শাহীনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। শাহীন রাজারহাটের স্থানীয় বাসিন্দা ও অস্ত্রধারী হওয়ায় প্রতিবাদের সাহস দেখায়নি কেউ। মাস দুই আগের ঘটনা। রামনগরের এক মুরগী ব্যবসায়ীর নিকট পিকনিক বাবদ একলক্ষ টাকা দাবি করে। ব্যবসায়ী চাঁদা না দেওয়াই তার মুরগীর খামার ছিন্নভিন্ন করে দেয় এসময় মুরগির খাবার রাখার গুদামও ভাংচুর করা হয়। এই মিশনে , শাহিন সহ মিজান, শামীম,তোসির এবং ডিজে তাসকিন’রা অংশ নিয়েছিলো।

বর্তমানে শাহীনের বড় ভাই জিয়ান , পুকুরকুল এলাকায় ইয়াবা ব্যবসাব্যবসা পরিচালনা করেন। জিয়ানের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই । ভাই শাহিনের দাপটে দম্ভভরে ব্যবসা চালাচ্ছে জিয়ান।

সর্বশেষ গেল মঙ্গলবার গভির রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী একদল লোক তাকে তুলে নিয়ে যায় এর পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী থেকে বৃহস্পতিবার তার লাশ উদ্ধার করে সময়মত পরিচয় সনাক্ত করতে না পেরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেছে মাগুরা জেলা পুলিশ।

এদিকে , শাহিনের মৃত্যু সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শস্তি প্রকাশ করেছে এলাকার নির্যাতিত মানুষ। কিন্তু দারুন ব্যথিত সাবেক এমপি খালেদুর রহমান টিটোর ছেলে মাসুক হাসান জয়। প্রতিক্রিয়ায় শাহীন তাদের সঙ্গে রাজনীতি করতেন বলে নিশ্চিত করে বিএনপি জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আলমগীর হত্যা মামলায় শাহীনকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি জয়ের। সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মৃত্যুপূর্ব জবানবন্দিতে তার ওপর হামলাকারীদের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেখানে শাহীনের নাম ছিল।

আরো সংবাদ