আজ - বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৬:১৫

বিলাসবহুল গাড়ির মালিক শহরের মেয়র যখন ‘ছদ্মবেশে’ ময়লা কাপড়ে শ্রমিকের বেশে !

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি,

বরাবরই তিনি ভিন্নমাত্রার সমাজসেবায় নজর কেড়েছেন প্রায় সবারই। এবার তারই ধারাবাহিকতায় ব্যতিক্রমি এক ঘটনার জন্ম দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে হৈ হুল্লোড় ফেলে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। নিজের গ্যারেজে পাজোরোসহ দুইটা অত্যাধূনিক বিলাসবহুল ক্যারিবয় গাড়ি থাকার পরেও শ্রমিকের পোশাকে ময়লা শরীরে পায়ে হেঁটে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি। সেটিও আবার তথাকথিত ছদ্মবেশেই –

মেয়রের ঘনিষ্ঠজনদের দাবী, টানা ৭ দিন কখনো কৃষক, কখনো রিকশা চালক আবার কখনো বা সাধারণ শ্রমিকের বেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পৌর এলাকার পাড়া মহল্লার বিভিন্ন স্থানে আর ঘাপটি মেরে দেখেছেন ঠিকাদারদের কার্যক্রম, কোন অনিয়ম হচ্ছে কি না তা দেখতে মেয়র মহোদয়ের এমন ব্যতিক্রমি মিশনকে অবশ্য সাধুবাদ জানিয়েছেন মানুষ।
অনেকেই বলছেন, পৌরসভার ইতিহাসে একজন জনপ্রতিনিধির এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ এর আগে কখনো দেখেননি তারা। তবে প্রশংসাই শুধু নয়, ‘সমালোচনা অথবা টিপ্পনীর মুখেও পড়তে হয়েছে মেয়রকে।
ফেসবুকে একজন সেলিব্রেটির মন্তব্য ছিলো, এসব কাজ নিজের আত্মপ্রচারনার জন্যই নাকি করেছেন মেয়র! নইলে প্রায় দিনের ছদ্মবেশ ধারনের এমন জলজ্যান্ত ছবিই বা কিভাবে এলো?
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের এই ছদ্মবেশে ঘুরাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এটাকে হাস্যকর কাজ হিসাবে মন্তব্য করলেও সাধারণ শ্রেণী পেশার মানুষ এটাকে ভাল কাজের নমুনা বলে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, মেয়রের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, চুয়াডাঙ্গায় ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা যাতে কোন ভাবেই কারসাজি ও অনিয়ম করতে না পারে তার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছদ্মবেশে ঘুরছেন পৌর মেয়র। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় তিনি সাধারণ শ্রমিকের বেশে মহিলা কলেজ পাড়া, বুজরুকগড়গড়ি, রজনীগন্ধা সড়ক ও হাজরাহাটি গ্রামে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ তদারকি করেন।

এমন ছদ্মবেশ ধারণের কারণ হিসেবে মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু জানান, প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নতি হবার পর সব চেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে চুয়াডাঙ্গায়। ইউজিপি-৩ প্রকল্পের এই উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়ক বাতি উন্নয়নের কাজ। যা গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, কাজ শুরুর পর ঠিকাদাররা যাতে কোন ভাবেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে না পারে তার জন্যই ছদ্মবেশে ঘুরছেন তিনি।

পৌর মেয়র আরো জানান, ভোটের আগে পৌরবাসীর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধ পরিকর তিনি। আর এ কারণে পৌরবাসীর উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারদের অনিয়ম কোন ভাবেই বরদাশত করা হবে না। তিনি জানান, কাজ শুরুর পর ঠিকাদাররা যাতে কোন ভাবেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে না পারে তার জন্যই ছদ্মবেশে ঘুরছেন তিনি। আর এ কারণে নিজেকে কখনো কৃষক, কখনো রিকশা চালক ও কখনো সাধারণ শ্রমিক বেশে হাজির হচ্ছেন চলমান উন্নয়ন কাজের স্থানগুলোতে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য অভিযান সুজনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসার মাহাবুল ইসলাম সেলিম বলেন, ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় মেয়রের এই উদ্যোগ যদি লোক দেখানো না হয় তা হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবার বড় দৃষ্টান্ত হবে। একই সাথে ঠিকাদারদের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধেও এই উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

উল্লেখ্য , শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে নানা সামাজিক কার্যক্রমে এই মেয়রের এমন ভুমিকা অবশ্য আগেও দেখা যেত। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার অভিযানে নেমেছিলেন স্থানীয় পৌর মেয়র ও জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত ২৬ এপ্রিল সকাল থেকে হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর নেতৃত্বে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান নজর কেড়েছিলো সবার।

এদিন, সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এতে ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। তারা হাতে ও মুখে গ্লাস পরে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ, ওয়ার্ড, রোগীর বিছানা, ফ্লোর ও ড্রেন পরিষ্কার করেন। এছাড়া হাসপাতালে বিভিন্ন দেয়ালে থাকা ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করা হয়।

আরো সংবাদ