আজ - শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি, (বর্ষাকাল), সময় - সকাল ৮:২৯

মাদকাসক্তদের চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন

সম্পাদকীয়: দেশে মাদকাসক্তিতে ভুগিতেছে এইরূপ মানুষের সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। অথচ চিকিত্সকের সংখ্যা মাত্র ২২০ জন। সম্প্রতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই তথ্য জানা যায়। বলা হয়, চিকিত্সক সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে মাদকাসক্তদের যথাযথ চিকিত্সা সেবা। তাই বলিয়া মাদকাসক্তির চিকিত্সা কিন্তু থামিয়া নাই। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নামে বহু ক্লিনিক চালু রহিয়াছে শহরগুলিতে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চিকিত্সা দিতেছেন চিকিত্সকেরা, যদিও তাহারা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নহেন। অথচ মাদকাসক্তির চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদেরই করা উচিত। অন্যদিকে, গ্রামাঞ্চলে তথাকথিত কবিরাজ ও ফকিররা মাদকাসক্তদের প্রহার করিয়া, পিটাইয়া, পানিতে চুবাইয়া, নানাভাবে অত্যাচার করিয়া থাকে। সুচিকিত্সার অভাবে দরিদ্র মানুষের রোগ ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং চিকিত্সা জটিল হইয়া ওঠে। সমস্যা অন্যত্রও রহিয়াছে। মাদকাসক্তির চিকিত্সায় নিয়োজিত ক্লিনিকগুলির লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তে ন্যস্ত। ইহা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনয়ন করা প্রয়োজন বলিয়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

মাদকাসক্তের সংখ্যা দেশে ক্রমশই বৃদ্ধি পাইতেছে। তন্মধ্যে তরুণরাই সংখ্যাধিক। সম্ভাবনাময় প্রজন্মের একটি বড় অংশই মাদকের দাস হইয়া পড়িয়াছে। মাদকের দাসত্ব ভয়ঙ্কর। অথচ এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, আনন্দময় পরিস্থিতির উদযাপন কিংবা বেদনাদায়ক পরিস্থিতি ভুলাইয়া দিতে মাদকের জুড়ি নাই। সম্ভাবনাময় একজন তরুণ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করিতেছে মাদকের নিকট। ইহার চাইতে বিপজ্জনক ও আত্মবিধ্বংসী পরিস্থিতি আর কী হইতে পারে? মাদকাসক্ত ব্যক্তি হইল মানবসম্পদের বিপুল অপচয়। যেই ব্যক্তি সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখিতে পারিত, সেই ব্যক্তি হইয়া পড়ে সমাজের বিশাল বোঝা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহারা নানান অপরাধকর্মে লিপ্ত হইয়া পড়ে।

তাই মাদকাসক্তি নিরাময় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতি তৈরি করিতে হইবে যাহাতে কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরাই মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিত্সা করিতে পারে। এইজন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ ও অবকাঠামো গড়িয়া তোলা অত্যন্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলিতে মাদকাসক্তদের চিকিত্সার জন্য যদি যথাযথ ব্যবস্থা না থাকে তাহা হইলে বিশেষ ইউনিট সংযুক্ত করা যাইতে পারে। অনভিজ্ঞ ও অযোগ্যদের সম্বল করিয়া নিরাময় কেন্দ্র খুলিবার বাণিজ্যিক প্রয়াসকেও নিয়ন্ত্রণে আনিতে হইবে। প্রয়োজনে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হইতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের বিষয়টিও ভাবা যাইতে পারে। কারণ মাদকাসক্তির সহিত অপরাধের চাহিতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির যোগটাই অধিক। অন্যদিকে মাদকাসক্তির চিকিত্সা দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল হইয়া থাকে। দরিদ্র মানুষদের জন্য চিকিত্সাটি সুলভ করা প্রয়োজন। আর চিকিত্সা বা প্রতিকারের পাশাপাশি মাদকাসক্তি প্রতিরোধের প্রয়াসও জোরদার করা প্রয়োজন। পিতা-মাতার দাম্পত্য কলহ সন্তানদের উপর মানসিক চাপ ফেলে। পারিবারিক বন্ধন আলগা হইবার কারণেও অনেকে মাদকের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে। আবার বাবা-মা উভয়েই চাকুরীজীবী হইবার কারণে বা নানান কারণে ব্যস্ত থাকিলেও অল্প বয়সে শিশু-কিশোরদের মাদকাসক্ত হইবার আশঙ্কা থাকে। সবচাইতে করুণ পরিস্থিতিতে রহিয়াছে ছিন্নমূল শিশুরা। অত্যন্ত কম বয়সে তাহারা মাদকাসক্ত হইয়া পড়ে। তাই এই সকল ক্ষেত্রে নজর দিতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থাদির পাশাপাশি গড়িয়া তুলিতে হইবে সামাজিক আন্দোলন। সেই সঙ্গে সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির প্রচারাভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করিতে হইবে।

আরো সংবাদ