মিন্নিকে পাঠানো নয়ন বন্ডের শেষ এসএমএস বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ শরীফ ওরফে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন নয়ন বন্ড। সেই বন্ড ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির প্রথম স্বামী; যা গোপনীয় ছিল। পরে স্ত্রী মিন্নির পরিকল্পনায় দ্বিতীয় স্বামী রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করে প্রথম স্বামী নয়ন বন্ড। আর এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। যখন রিফাত শরীফের মৃত্যু হয় তখন মিন্নিকে শেষ এসএমএস পাঠান নয়ন বন্ড। সেই এসএমএস খুঁজে পেয়েছিল তদন্তকারী দলের সদস্যরা। তদন্তকারী দলের এক সদস্য সেই এসএমএস-এর কনটেন্ট গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকে জানান, নয়ন বন্ডের সঙ্গে গোপনে বিয়ে হয়েছিল আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির। আর সেই বিয়ে গোপন করেই রিফাত শরীফের সঙ্গে সংসার পাতেন মিন্নি। গোপন সম্পর্ক থাকায় নয়ন বন্ড তার মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা একটি সিম মিন্নিকে দেন। মূলত রিফাত শরীফকে বিয়ে করার পরও সেই সিম দিয়েই নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন মিন্নি। এ সিম ছাড়াও আরো কয়েকটি সিম দিয়ে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন মিন্নি।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৯ টা ৮ মিনিটে নয়ন বন্ডের মায়ের রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়েই নয়ন বন্ডের সঙ্গে ছয় সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এ কলের ৩০ মিনিট পর একই নম্বর দিয়ে নয়ন বন্ডকে আবারো কলে দেন মিন্নি। এ সময় ৩৫ সেকেন্ড কথা বলেন। এ কলেরও ২৮ মিনিট পর নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে থাকা ওই নম্বরটিতেই আবার কল দেন। তখন তারা মাত্র ৪০ সেকেন্ড কথা বলেন।
এরপর সকাল সোয়া ১০টায় রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে নয়ন বন্ড নেতৃত্বাধীন ‘জিরো জিরো সেভেন’ বাহিনী। হামলার পর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটের সময় মিন্নিকে একটি এসএমএস পাঠান নয়ন বন্ড। বিকেল ৩টায় মিন্নির সঙ্গে এক মিনিট ২০ সেকেন্ড কথা বলেন নয়ন বন্ড।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তদন্তের স্বার্থে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ব্যবহৃত নম্বরের কললিস্ট ও এসএমএস কনটেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর মিন্নির কাছে একটি এসএমএস পাঠান নয়ন বন্ড। বিকেল ৪টার কিছু সময় আগে এসএমএসটি পাঠানো হয়েছিল। সেই এসএমএসটিতে লেখা ছিল, আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।
এসএমএসের বিষয়ে রিমান্ডে মিন্নি জানান, রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনার সময় নয়ন বন্ডকে চ্যালেঞ্জ দেন মিন্নি। নয়ন বন্ডকে মিন্নি বলেন, ‘তুমি যদি রিফাত শরীফকে মারতে পার, তাহলে বুঝবো তোমারে তোমার বাপেই জন্ম দিছে।’ মূলত চ্যালেঞ্জ পূরণ করেই মিন্নিকে এসএমএসটি পাঠান নয়ন বন্ড।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা নম্বরটি এক সময় ব্যবহার করতেন নয়ন বন্ড। পরে সেই নম্বরটি পরিবর্তন করে মিন্নিকে দেন তিনি।
বুধবার দুপুরে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে খালাসের রায় দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান। খালাস প্রাপ্তরা হলেন- রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর, কামরুল ইসলাম সায়মুন, মো. মুসা।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত করে। এরপর বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ছাড়েন তারা। গুরুতর আহত রিফাত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওইদিনই মারা যান।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। একইসঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ৮ জানুয়ারি একই মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনার শিশু আদালত।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ