আজ - সোমবার, ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৪:১২

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে-জন্মদিনে: হুইপ স্বপন এমপি

দেখতে, দেখতে ৫৪ !
আর কতদিন এই পূণ্যক্ষেত্রে থাকতে পারব তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।
চারিদিকে অজস্র ঋণে ভারাক্রান্ত আমি। ছাত্ররাজনীতি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি, নির্বাচন – প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক সহকর্মী, বন্ধু, স্বজন, বড় ভাই এবং অসংখ্য নাম না জানা ব্যক্তি আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।

শরীরের ঘাম, পকেটের অর্থ, নিজের প্রত্যাশা স্যাকরিফাইস থেকে শুরু করে আমার জন্য অন্যের নিকট হাত পাতা, অনূনয়, বিনয় করা সহ অসংখ্য সহযোগিতায় আজ আমি আমার বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত আসতে পেরেছি। কখোনোই কোন রাজনীতিবিদ কেবলমাত্র স্বীয় যোগ্যতায় ওপরে উঠতে পারেন না। প্রত্যেক সফল রাজনীতিবিদের ওপরে ওঠার বন্ধুর পথচলায় অসংখ্য সহকর্মী, ছোট, বড়, রাজনৈতিক -অরাজনৈতিক ব্যক্তির সহযোগিতা, ঘাম, শ্রম, অর্থবিত্ত ও সহকর্মীর স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার অপমৃত্যু ওৎপ্রোতভাবে জড়িত থাকে।

আমাকে কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুরের যে সম্মানিত ব্যক্তিগণ এমপি বানিয়েছেন তাদের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। ২০০৬ সালে মহাত্মা নেত্রী সদয় হয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক কারনে আমাকে মনোনয়ন দান করলেন আমার জন্মস্থানের পাশের আসনে। এই আসনের জনগণ, এমনকি দলীয় কর্মীরা পর্যন্ত আমাকে চিনতেন না। নির্বাচন শুরু হল, কেবলমাত্র নেত্রীর মনোনয়নের কারনে দলের অনেক মাঠকর্মী আমার নামে শ্লোগান শুরু করলেন। ২০০৮ সালে মনোনয়ন প্রাপ্তির পর অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অবশেষে দলের গ্রামগঞ্জের ৯৯ শতাংশ নেতাকর্মী আমার নামে মাতম করেছেন। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের সঙ্গে আমার সামান্যতম পরিচয়ও ছিল না।

কেবলমাত্র নৌকার অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তির কল্যাণে কত মানুষ আমার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, ঘাম ঝড়িয়েছেন, আমাকে জনগণের নিকট পজিটিভভাবে তুলে ধরেছেন, ফসল বিক্রির টাকা খরচ করেছেন, নিজ পরিবারকে বঞ্চিত করেছেন, আমার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতেছেন। সেই সময়ে এই অগণিত সহযোদ্ধাগণ আমার জন্য এক লক্ষ চৌদ্দ হাজার ভোট সংগ্রহ করেছিলেন। সেবার আমি জিততে পারি নি।

আমি আমার শরীরের চামড়া দিয়ে আমার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো এই মানুষগুলোর পা’য়ের জুতা বানিয়ে দিলেও কোনদিন ঋণ শোধ হবে না। আবার বাস্তবে এটি সম্ভবও না। তাদের নিকট অজস্র ঋণ নিয়েই কবরে যেতে হবে। চেষ্টা করি, যেন তাদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারি। সেক্ষেত্রেও আমার সফলতার মাত্রাতে আমিই সন্তুষ্ট নয়।

মহাত্মা নেত্রী স্বীয় ইচ্ছায় একটি প্রতিকূল জনপদের মেঠোপথ থেকে তুলে নিয়ে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়েছেন। তাঁর নিকট ঋণ কোনভাবেই সামান্যতম কমানোর কোন সুযোগ নেই, বরং প্রতিনিয়ত ঋণের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কত জেলায়, উপজেলায় কত সহকর্মীর বাড়িতে আপ্যায়িত হয়েছি, তাদের অনেককে এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াতে পারি নি। কত সহকর্মী বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতিদান দিতে পারি না।

এক অদ্ভূত জীবন আমার ……। রাষ্ট্র, রাজনীতি, দল সর্বত্রই প্রাপ্তিযোগ আশাতীত। কিন্তু মাথার ওপর পর্বতসম ঋণের বোঝা। বেশ কিছুদিন ধরেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, পেলাম অনেক, দিলাম কি ? বয়স ৫৪ হল, এই বয়সে কত মানুষ রাষ্ট্র, সমাজ, বিশ্বকে কতকিছু দিয়েছেন। আমি অধম কেবল পেলাম, উল্লেখ করার মত কিছুই দিতে পারলাম না !!! হয়ত ঋণের বিশাল বোঝা নিয়েই আমার অতৃপ্ত আত্মা আমার চলে যাবে সৃষ্টিকর্তার কৃপাতলে, শরীর যাবে মাটির নীচে ( যদি লাশ পাওয়া যায়)।

আমার ৫৪ তম জন্মদিনে যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে..

তখনও বেঁচে থাকতে চাই কর্মের মাঝে। রাব্বুল আ’লামীন সেই সুযোগ দিন, আমীন…..

আরো সংবাদ