আজ - বুধবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শরৎকাল), সময় - রাত ১:২৯

যশোরে তাপদাহে পিচ গলা সড়ক তদন্তে নেমেছে দুদক।

যশোরে তাপদাহে পিচ গলা সড়ক তদন্তে নেমেছে দুদক। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় যশোর নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন দুদকের কর্মকর্তারা। দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসময় সড়ক ও জনপদ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই সপ্তাহ আগ থেকেই প্রচন্ড এ তাপদাহের কারণে গলতে শুরু করে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পিচ। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরিবহন শ্রমিক, নেতাসহ সচেতন মহলের দাবি দুর্নীতি করতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পিচ গলে যাচ্ছে। এতে করে যানবাহন চলাচলে সমস্যায় পড়ছেন চালকরা। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন দুদকের কর্মকর্তারা। এসময় তারা সড়কের কাজ নিম্নমানের বলে মন্তব্য করেন। একইসাথে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানানো হয়। সড়ক পরিদর্শনকালে দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী, সহকারী পরিদর্শক সাফিউল্লাহসহ সড়ক বিভাগের দুইজন সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন।

যশোর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষা করেছি। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবো। তদন্তের স্বার্থে আমরা এর বেশি বলতে পারছি না।’

সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, চার মাস আগে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কে পাথর কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সরেজমিনে যশোর-নড়াইল সড়কের যশোর অংশের ঝুমঝুমপুর এলাকাতে দেখা গেছে, সড়কের পিচ গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সড়কে যান চলাচলের সময় পিচ চাকায় লেগে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। যশোর-নড়াইল সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এই সড়ক সংস্কারের সময়। এ সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে তাপদাহে সড়কের পিচ গলে যাওয়াতে নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন স্থানীয়রা। নির্মাণ সংশ্লিষ্ঠদের নির্মাণ কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুদক ও সড়ক জনপদের কর্মকর্তাদের সামনে। মুরাদ হোসেন নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘রোদ গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ যেনো কাদায় পরিণত হয়। ফলে রিকশার চাকা রাস্তায় আটকে যায়। এতে তাদের এক্সিডেন্টের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি রাস্তারও এবড়ো থেবড়ো হয়ে যাচ্ছে।’

নিরব হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘যশোর নড়াইল মহাসড়ক নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। যেভাবে নির্মাণ করছে, এতে ভোগান্তিতে পড়ে। সড়কে হেঁটে চললে জুতা পিচের সঙ্গে আঁটকে যাচ্ছে। এর দায় হচ্ছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের।’

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ‘সরকার সড়কের জন্যও সঠিক বরাদ্দ দিয়েছে। কিছু ঠিকাদার ও সরকারি কর্তকর্তাদের অনিয়ম দায়সারা কাজের জন্য সরকারের বদনাম হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই রোদে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। হেঁটে গেলে জুতার সোল আটকে যাচ্ছে। আমার বাইকের দুটো টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে এই সড়কে। এতো নিম্নমানের কাজ করেছে, যে ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করেন তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে এই পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।

সওজ সংশ্লিষ্ট সূত্র পিচ গলার কারণ হিসেবে বলেছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অনুভূতির পরিমাণ আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি হয়। সড়কের পিচের উপরে এই তাপমাত্রা আরও প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর কালো হওয়ায় এই পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি। এছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘যশোর-নড়াইল সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে; গরমে সেখানে বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এজন্য গলে যাওয়া স্থানগুলোতে বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে; যাতে গলে যাওয়া পিচ পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়কে নিম্নমানের কোন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তাদের তদন্তে জানা যাবে।’

আরো সংবাদ