আজ - শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১:০৭

যশোরে ২৫ দিনে ৯টি খুন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ

প্রতিনিয়ত যশোর জেলায় কোথাও না কোথাও ঘটছে খুন খারাপি। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। খুন ছাড়া বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও দস্যুতা হচ্ছে। একের পর এক হত্যার ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে জেলাজুড়ে। গেল ২৫ দিনে যশোরে ৯টি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেদের আক্রোশ হয়ে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়াচ্ছে। পলিশের নিস্কৃতার কারনে এসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। জেলার কোথাও কোন পুলিশের দৃশ্যমান কর্মকান্ড দেখা যাচ্ছেনা।
সবশেষ ছুরিকাঘাতে আসাদুল ইসলাম আসাদ (৩৫) নামে এক যুবককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত আসাদ পেশায় একজন শ্রমিক ও শহরের খড়কি দক্ষিণপাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে। তবে বর্তমানে শহরতলী ঝুমঝুম একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী নিয়ে ভাড়া থাকতেন।
শহরের শেখহাটি আর্দশপাড়ায় শাহানারা বেগম সানা (৫০) নামে এক গৃহবধূকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তিনি ওই এলাকার ইজবাইক চালক আতিয়ার রহমানের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে নিজ বাড়িতে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
চৌগাছায় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা হত্যাকান্ডের ২২ বছর পর সেই আসামিদের হাতে খুন হন তার আপন ভাই আনিসুর রহমান। গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে তাকে কুপিয়ে জখমের পর বুধবার ভোরে আনিসুরের মৃত্যু হয়। নিহত আনিসুর রহমান (৫৫) উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে ও নিহত ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা’র সেজো ভাই। হামলায় আনিসুরের ফুফাতো ভাই আব্দুস সালামও আহত হন। হামলাকারীরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং চেয়ারম্যান আশা হত্যা মামলার আসামি।
বেনাপোল দীঘিরপাড় গ্রামে কহিনূর খাতুন নামে এক গৃহবধূকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
বেনাপোল দীঘিরপাড় গ্রামে কহিনূর খাতুন নামে এক গৃহবধূকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
চৌগাছায় ইটের সলিং রাস্তা নির্মান কাজে অনিয়মে বাধা দেওয়া বিএনপি কর্মী খুন হয়। নিহত শওকত আলী (৩২) বিএনপি কর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় আহত হয় আরো ৩ জন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) উপজেলার সুকপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া মোল্যাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শওকত আলী পুড়াপাড়া গ্রামের মোল্যাপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে। এঘটনায় আহতরা হলেন একই গ্রামের কিয়াম উদ্দীনের ছেলে শনু মিয়া (৩৫), ইউসুফ আলী (৩০) মৃত ওসমান আলীর ছেলে মুখতার হোসেন (৪০)।
আহত শওকত আলীকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে চৌগাছা সরকারি হাসপাতলে ভর্তি করলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোরে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করনে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাইদুর রহমান ইমন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা রেফার করেন। ঢাকায় চিকিৎসত রত অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই শওকত আলীর মৃত্যু হয়।
শহরের বকচর এলাকায় রাণী চানাচুর কোম্পানির ক্যাম্পাসের মধ্যে মিলন নামে এক গরু খামার কর্মচারীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে এগারোটার পর থেকে ১৪ অক্টোবর সকালের মধ্যে যেকোনো সময় এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি জানায়। নিহত মিলন মণিরামপুর উপজেলার জালঝাড়া খালকান্দা গ্রামের আসমত আলীর ছেলে।
নুর নাজমার (৩০) নামে এক গৃহবধূকে তার সাবেক স্বামী কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে। সদর উপজেলার গোয়ালদহ গ্রামের ইটভাটার সামনে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা ৩ টার দিকে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
একইদিন বেনাপোল চাত্রের বিলের মাছের ঘের থেকে অহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকালে বেনাপোল সীমান্তের চাত্রের বিল এলাকার আক্তার মাহমুদ বাবলুর মাছের ঘের থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গতকাল ১০ অক্টোবর সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই যুবক। সে ওই মাছের ঘেরে গার্ডের কাজ করতো। নিহত অহিদুল ইসলাম ছোটআঁচড়া পূর্ব পাড়া এলাকার নিছার আলী খোকনের ছেলে। তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে।

সাইফুল ইসলাম সাগর (৩৫) নামে এক সন্ত্রাসীকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরতলীর ভেকুটিয়া গ্রামে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। সাগর সদর উপজেলার বালিভেকুটিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অযোগ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সরিয়ে যোগ্যদের দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে সহিংসতা আরও বেড়ে যাবে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণেও অপরাধ বাড়ছে। তাছাড়া পুলিশের ঢিলেঢালা টহল, অপরাধ ঘটার পর পুলিশের দুর্বল চার্জশিট দাখিল ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেও অপরাধ বেড়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে সঠিক তদন্ত করে চার্জশিট দাখিলের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সাক্ষীর ব্যবস্থা করে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শাসক দলের কেউ অপরাধ করলে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। অস্ত্রবাজদের তালিকা হালনাগাদ করে চিরুনি অভিযানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছিল, তারাই এখন আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার। কেউ বিদেশে বা কারাগারে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে টেন্ডার, দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। হঠাৎ করেই হত্যাকাণ্ড, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে তা সত্য। সামনের দিনগুলোতে সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
র‌্যাব ৬ যশোরের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী অধিনায়ক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. রাসেল বলেন, আমরা অপরাধ দমনের সবসময় তৎপর আছি। কোন অপরাধ যেন সংঘটিত না হয় এর জন্য আমাদের নজরদারি চলমান আছে। এছাড়া কোন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অপরাধী সনাক্ত ও আটকের তৎপরতা চালানো হয়। র‌্যাব ৬ যশোর মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে সব সময় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, আসলে ভিন্ন ভিন্ন কারণে এ হত্যার ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে পুলিশ তৎপর রয়েছে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আটকের জন্য। আর কেন এত হত্যাকান্ড ঘটছে এ বিষয়ে মোটিভ খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। এছাড়া এ পর্যন্ত হত্যার সাথে জড়িতোর অভিযোগে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, জমিজমা সংক্রান্ত, পারিবারিক কলহ ও পূর্ব শত্রুতার জেরসহ নানা কারণে এ হত্যাকান্ডগুলো ঘটছে। এছাড়া এ হত্যায় জড়িতদের আটোকের উদ্দেশ্যে পুলিশসহ একাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত