আজ - সোমবার, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - রাত ৪:৫৪

যেভাবে খুব গোপনে ইউক্রেন সফর করলেন জো বাইডেন।

অন্ধকারে ওড়ে বিমান, ট্রেনে দশ ঘণ্টা: যেভাবে কিয়েছে পৌঁছান বাইডেন
এ এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। বিমানের জানালা বন্ধ। পোল্যান্ডে বিমান নামার পর দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা। এভাবেই গোপন সফরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পৌঁছান বাইডেন।

ভোর চারটা। অন্ধকারের মধ্য়ে ওয়াশিংটনের বাইরে সেনাঘাঁটি থেকে একটি বোয়িং ৭৫৭ বিমান উড়ল। বিমানটির নাম সি-৩২। বিমানে যাত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সাধারণত এই বিমানবন্দর থেকে এই বিমানে চড়ে বাইডেন বিদেশ সফরে যান না। কিন্তু এটা তো আর পাঁচটা ঘোষিত সফর নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানীতে। সেটাও আবার গোপন সফর। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্তাব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জানে না। এই সফরের কথা।
বিমানটি যখন বিমানবন্দরে ছিল, তখন তার প্রতিটি জানালা বন্ধ করে রাখা ছিল। যাতে বাইরে থেকে কিছুই দেখা না যায়। আলোও বাইরে না যায়।বিমান ছাড়ার মিনিট ১৫ আগে তাতে ওঠেন বাইডেন, তার বাছাই করা কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসকের দল, ঘনিষ্ঠ কয়েকজন পরামর্শদাতা এবং দুইজন সাংবাদিক। দুই সাংবাদিককেই আগে গোপনীয়তার শপথ নিতে হয়েছে।

বাইডেনের বিদেশ সফরে সাধারণত বিভিন্ন রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র থেকে ১৩ জন সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিক যান। এক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছিল মাত্র দুইজনকে। তারমধ্যে একজন চিত্রসাংবাদিক।

রিপোর্টার সাবিনা সিদ্দিকি হলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক। আর ছিলেন এসোসিয়েট প্রেসের চিত্রসাংবাদিক ইভান। তাদের বিমানবন্দরে রাত দুইটা ১৫ মিনিটে ডাকা হয়েছিল। তাদের ফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বাইডেন কিয়েভে পৌঁছানোর পর তা ফেরত দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাত্রা শুরু করার পর বিমানটি জার্মানির মার্কিন ঘাঁটিতে নামে জ্বালানি ভরার জন্য। তখনও বিমানের জানালা নামানো ছিল। কাউকে বিমান থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। পরের গন্তব্য পোল্যান্ডের বিমানবন্দর। ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই বিমানবন্দরই পশ্চিমা দেশের অস্ত্র সরবরাহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এখান থেকে সকলে ট্রেনে উঠলেন। সাংবাদিকরা তখনও বাইডেনকে দেখেননি। ট্রেনে মোট আটটি কামরা ছিল। প্রায় সব কামরাই ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর দখলে। বাইডেন বরাবরই ট্রেনে চড়তে ভালবাসেন। সিনেটর থাকার সময় তিনি ট্রেনে করেই নিজের নির্বাচনকেন্দ্র ও বাড়ি থেকে ওয়াশিংটন যেতেন।

১০ ঘণ্টা পরে ট্রেনটি কিয়েভ পৌঁছায়। তখন সূর্যোদয় হচ্ছে। এ এক অন্য ট্রেন যাত্রা। এই যাত্রায় মার্কিন সেনা ট্রেনের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছাচ্ছেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীর দিন কয়েক আগে।

যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন কিয়েভ এসেছিলেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবার এলেন। বললেন, কিয়েভে আবার আসতে পেরে ভালো লাগছে।

বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গত প্রায় এক বছরে বারবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে তারা পাশে থাকবে। সেই বার্তা নিয়েই তিনি যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে ইউক্রেন সফর করেন।

জেলেনস্কি বলেন, বাইডেনের এই সফর ইউক্রেনকে যুদ্ধজয়ের কাছে নিয়ে আসবে। কিয়েভের ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি আয়া ইব্রাহিম জানিয়েছেন, বাইডেন আসার আগে পুরো শহরে সাইরেন বেজে ওঠে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পা দেওয়া একটা অসাধারণ ঘটনা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইডেন এই সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে একটা বার্তা দিলেন। তিনি বিশ্বকে এটাও দেখিয়ে দিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বেই পশ্চিমা দেশগুলো এই যুদ্ধ রাশিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করছে এবং করে যাবে।

কিয়েভ থেকে বাইডেন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশে গেছেন। সেখানে তিনি দুইদিন থাকতে পারেন। এক বছরের মধ্যে এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার পোল্যান্ড সফর করলেন।

আরো সংবাদ