আজ - শনিবার, ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - দুপুর ১:০১

যে কোন সময় শুরু নৌকার মনোনয়ন

ঢাকা অফিস: আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এমনটা ধরে হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে ঈদুল ফিতরের পর থেকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করবে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে কানাডা জি-৭ সম্মেলনে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কোচেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

ঈদের পর থেকে প্রতি সপ্তাহে শুক্র বা শনিবার গণভবনে দলের সংসদীয় বোর্ড ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে নৌকার সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের সমস্যা-সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করবেন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে বিষয়টিতে মাথায় রেখেই ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলোকে আসনগুলো ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি মাথায় মনোনয়নের রূপরেখা করবে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (৪ জুন) গণভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সম্মানে ইফতার মাহফিলের পর রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দলের কয়েকজন নেতা সাক্ষাত করেন। এ সময় শেখ হাসিনা ঈদের পর প্রতিটি প্রতি সপ্তাহে শুক্র বা শনিবার যেকোনো একদিন ঘরোয়া বৈঠক করে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এ ছাড়াও এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কোচেয়ারম্যান হোসেন তওফিক ইমামের (এইচটি ইমাম) সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। জি-৭ সফর শেষে ফিরেই প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন ঘরোয়া বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে রূপরেখা ও কৌশল নির্ধারণ করবে দলটি।

এদিকে গত ১৬ এপ্রিল সোমবার দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওযামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে। কমিটির কোচেয়ারম্যান মনোনিত হন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমাম ও সদস্য সচিব হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনা, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কাজী জাফর উল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন আহমেদ ও রশিদুল আলম।

তবে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরলোক গমন করেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদীয় বোর্ডের এক সদস্য সারাবাংলাকে জানান, আমরা ঈদের পর প্রতি সপ্তাহে সংসদীয় বোর্ডের ঘরোয়া বৈঠকের ব্যাপারটা শুনেছি। নেত্রী বিদেশ থেকে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে আমরা ওনার নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। কারণ আমাদের ভাবনায় এখন শুধ্ইু নির্বাচন। এজন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী, দলীয় সংসদ সদস্য ও তৃণমূলের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় জনসম্পৃক্তা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এ ধারাবাহিকতায় তিনি কয়েকটি বিভাগীয় শহর ও জেলায় জনসভা করেন। গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটের জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলটি হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করে।

এ ছাড়াও দলটি কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ৮ মাসব্যাপী এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১২ লাখ কর্মীকে পোলিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দলটি। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ হিসেবে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে-(ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে, এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ সে হিসাবে, বর্তমান দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদপূর্ণ করলে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন ভোট হতে হবে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। সেদিন থেকেই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়েছে। সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বতোভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে।’

বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টি কি সরকারি জোটে যোগ দেবে, না এককভাবে নির্বাচন করবে? এসবের অনেক কিছুই ঈদের পর দৃশ্যমান হবে। আবার আগামী জুন ও জুলাই মাসে ৪ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ভোট ব্যস্ততার পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি সেরে ফেলতে চায় দলটি।

এ কারণে গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, কত সিট চান, এটা তো আমরা জানি! আমাদের কাছে অলরেডি আপনাদের তালিকা আছে। এটা পত্রিকায় দেওয়ার দরকার নেই।

জোটে কে কত আসন পাবে? সেটা আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। প্রকাশ্যে আমরা কে কত সিট দাবি করছি- এটা আমার মনে হয়, না বললেই ভাল। আর কত সিট চান, এটা তো আমরা জানি! আমাদের কাছে ইতোমধ্যে আপনাদের তালিকা আছে। এটা আবার পত্রিকায় দেওয়ার তো দরকার নেই। এ ছাড়াও সরকার দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে শীঘ্রই বসাবসি শুরু হবে বলেও সে সময় জানান তিনি। আর এ বিষয়ে গত ১৪ এপ্রিল রংপুর সার্কিট হাউসে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনসহ ৭০টি আসন দাবি করেন।

আরো সংবাদ