প্রকাশিত : » ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সময়: » ১:০৮ অপরাহ্ণ, পঠিত: » 1482 views
স্টাফ রিপোর্টার ঃ সম্পদের লোভে না পড়তে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন সংগঠনটির সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সম্পদের লোভ ক্রমেই বেড়ে চলে আর এক পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়।
শুক্রবার বিকালে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মরণে গণভবনে এক আলোচনায় এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশে সামরিক শাসনামলসহ বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। সব আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। বলেন, এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগেই সামরিক শাসন থেকে মুক্তি মিলেছে।
গত মে মাসে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি দেয়ার পর এই প্রথম সংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দিলেন শেখ হাসিনা।
উন্নয়নের পথে দেশের অগ্রগতি এবং চেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে তৈরি হতে বলেন।
‘নিজেকে আদর্শের নেতা হিসেবে যদি গড়তে পার, করতে পারবে। আর যদি সম্পদের লোভে গা ভাসিয়ে দাও, তাহলে হারিয়ে যাবে, ভেসে যাবে।’
‘বহু ছাত্রলীগ নেতারা চলে গেছে। কেউ বিএনপিতে এখানে সেখানে, তারা লোভে পড়েছিল, চলে গেছে। তারা তো দেশকে কিছু দিতে পারেনি। কিন্তু যারা আদর্শ নিয়ে চলেছে, তারাই দেশকে কিছু দিতে পেরেছে।’
শুধু পাওয়ার মধ্য দিয়েই তৃপ্তি আসে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেতে থাকলে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কখনও শেষ হয় না, তখন এই আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকে।’
‘মানুষের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, মানুষকে কী দিতে পারলাম, রাজনীতিক নেতা হিসেবে সেই চিন্তাটাই থাকতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই রাজনীতি করতে হবে।’
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘লেখাপড়া শিখতে হবে। সব থেকে বড় সম্পদ শিক্ষা। ধন সম্পদ চিরদিন থাকে না। কেই যদি অনেক সম্পদ বানিয়ে গর্ব করে, চিরদিন সে সম্পদ ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ, যে সম্পদ কেউ কখনও কেড়ে নিতে পারে না। তাই ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে সবার আগে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।’
‘সেই শিক্ষা নিয়ে, আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে হবে, যে আদর্শের পথ জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন।’
‘তোমাদের আদর্শ শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। শিক্ষার আলো জ্বেলে প্রগতির পথ ধরে শান্তির মশাল নিয়ে তোমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে জাতির জনকের কন্যা বলেন, ‘আদর্শ কেবল মুখে বলার নয়। আদর্শ অনুসরণ করা, অনুশীলন করা, আদর্শকে মেনে নেয়া, আদর্শ মেনে চলা-এটা হচ্ছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা যদি করা যায়, তাহলে দেশকে কিছু দেয়া যায়, দেশের জন্য কিছু করা যায়।’
‘একজন রাজনীতিবিদের জীবনে এই চিন্তা চেতনাই থাকা উচিত যে, রাজনীতি শুধু কী পেলাম না পেলাম, সে হিসাব কষার জন্য নয়। রাজনীতি শুধু মূল্যায়ন হলো কি হলো না, সে হিসাব করবার জন্য না। কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, কতটুকু মানুষকে দিয়ে যেতে পারলাম সেখানেই হচ্ছে তৃপ্তি আর সেখানেই হচ্ছে সবথেকে বড় পাওয়া।’
‘আর এইভাবে চিন্তা করে যারা রাজনীতি করে তাদের কিছু চাইতে হয় না, ইতিহাস তাদেরকে মূল্যায়ন করে।’
‘কেউ রাজনীতি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। কেউ রাজনীতি করে রাজনীতির ছত্রছায়ায় ধন সম্পদের, অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য। কেউ রাজনীতি করে সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু জনগণের কথা চিন্তা করে, জনগণের কল্যাণের কথা ভেবে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা মনে করে যারা রাজনীতি করে ইতিহাস তাকেই স্বীকৃতি দেয়, ইতিহাস তাদেরই মর্যাদা দেয়, ইতিহাসে তাদেরই নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে। শত চেষ্টা করেও তার নাম কখনও মুছে ফেলা যায় না।’
শাসরিক শাসক আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্রলীগের আত্মত্যাগও স্মরণ করেন শেখ হাসিনাভ। বলেন, ‘প্রত্যেকটা আন্দোলন-সেখানে যদি শহীদের তালিকা দেখি, সেখানে দেখব ছাত্রলীগের শহীদের সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বারবার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেই ছাত্রলীগকে সংগঠন হিসেবে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে একটা আদর্শের সংগঠন হিসেব।’