আজ - বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৮:২২

সওজ গুড়িয়ে দিল র‌্যাবের প্রাচীর – প্রকৌশলী ও চালককে পেটালো র‌্যাব!

স্টাফ রিপোর্টার।। যশোরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে একজন প্রকৌশলী ও বুলডোজার চালককে আটকে মারপিট করার অভিযোগ করা হচ্ছে র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বকারী ম্যাজিস্ট্রেটকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যশোর শহরের বকচর এলাকায় র‌্যাব ক্যাম্পের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তা।
যশোর শহরের পালবাড়ি মোড় থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত বিদ্যমান আঞ্চলিক মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে আজ সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা জোনের এস্টেট অফিসার সিনিয়র সহকারী সচিব অনিন্দিতা রায় এ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হচ্ছে, দুপুর আড়াইটার দিকে উচ্ছেদকারী দলটি শহরের বকচর এলাকায় র‌্যাবের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে যায়। এ কার্যালয়ের প্রাচীরটি ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় নির্মিত হওয়ায়’ উচ্ছেদকারী দল র‌্যাব সদস্যদের তাদের গাড়ি সরিয়ে নিতে বলেন। গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার পর প্রাচীরটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর উচ্ছেদকারী দল দুপুরের খাবারের বিরতিতে যায়। তখন র‌্যাবের কয়েক সদস্য ক্যাম্প থেকে বের হয়ে এসে বুলডোজার-চালক প্রতাপকুমার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরুণকুমার দত্তকে মারপিট করেন এবং বুলডোজারের সামনের কাচ ভেঙে দেন। পরে তাদের ধরে ক্যাম্পের ভেতর নিয়ে যান।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী সিনিয়র সহকারী সচিব অনিন্দিতা রায় অভিযোগ করেন, র‌্যাব কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই উচ্ছেদের বিষয় জানেন। তাদের সঙ্গে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের কথাও হয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা যা করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রত্যক্ষদর্শী বুলডোজারের এক চালক বলেন, ‘প্রাচীর ভাঙার আগেই ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাডাম র‌্যাব সদস্যদের গাড়ি সরাতে বলেন। গাড়ি সরানোর পরই প্রাচীর ভাঙা হয়। এরপর র‌্যাবের ১০-১৫ জন ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে চালক প্রতাপকুমার ও ইঞ্জিনিয়ার স্যারকে ধরে মারপিট শুরু করে। ভয়ে আমরা পালিয়ে যাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন জানান, র‌্যাব সদস্যরা হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারপিট ও বুট দিয়ে লাথি মেরে দুইজনকে রক্তাক্ত করেন। এরপর তাদের র‌্যাব অফিসের ভেতর নিয়ে বেঁধে রাখেন।
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন। তারা আটক দুইজনকে উদ্ধার করে আনেন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এএসপি সোহেল পারভেজ বলেন, ‘সওজের কোনো কর্মচারীকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সওজ আমাদের আগে থেকে কোনো নোটিস দেয়নি। প্রাচীর ভাঙা তাদের ভুল হয়েছে এবং আগামীকাল তারা এটি পুনঃনির্মাণ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এটি র‌্যাবের ভাড়া বাসার প্রাচীর। গত দুই মাস ধরে আমরা র‌্যাবকে উচ্ছেদের বিষয়টি অবগত করেছি। আমাদের দুইজন কর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন এবং একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’


জানতে চাইলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম পুলিশ সুপারের লিখিত বক্তব্যে জানান, প্রাচীর ভাঙাকে কেন্দ্র করে স্কেভেটর চালককে র‌্যাব আটকে রাখে। তাকে ছাড়াতে গেলে উপসহকারী প্রকৌশলী তরুণকুমার দত্তকে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তাকেও আটকে রাখে। এছাড়া উচ্ছেদে নেতৃত্বদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দিতা রায়কে গালিগালাজ করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বাড়ির মালিক পবিত্র কাপুড়িয়ার উপস্থিতিতে প্রাচীর, গ্যারেজ ও সেন্ট্রি পোস্ট পুনঃনির্মাণের শর্তে আটক দুজনকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
পুরো ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত বলে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘র‌্যাবের প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে- এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। র‌্যাব কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন, প্রাচীর ভেঙে ফেলায় ওই সময় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে সওজের কর্মীদের উপর চড়াও হয়। তখন র‌্যাব তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।’
সওজ কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু বলেছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘না-সূচক’ জবাব দেন।

আরো সংবাদ