আজ - শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি, (বর্ষাকাল), সময় - সকাল ৬:৫৫

বেগম জিয়ার মন্তব্য এখন টক অফ দ্যা কান্ট্রি : আনোয়ার হোসেন বিপুল।

ডুবে যাওয়া সাবমেরিন ও জোড়াতালির পদ্মা সেতু বিষয়ক বেগম জিয়ার মন্তব্য

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া’র সাম্প্রতিক দুটি মন্তব্য এখন টক অফ দ্যা কান্ট্রি।

 
প্রথমটি হচ্ছে, “বিদেশ থেকে আনা সাবমেরিন দুটি ডুবে গেছে, হাজার হাজার মানুষ দিয়েও তা তোলা যাবে না”।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, “এই সরকার জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওই সেতুতে কেউ উঠিবেন না”।দুটি মন্তব্যেরই প্রেক্ষাপট এবং সময় উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, প্রথম মন্তব্যটি তিনি করেন কয়েকদিন পূর্বে যখন, বাংলাদেশ সরকার নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও এটিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিদেশ থেকে দুটি সাবমেরিন ক্রয় করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক চট্রগ্রামে সাবমেরিন দুটি উদ্বোধনের দুইদিন পর বেগম জিয়া তার এক সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন।

ভাবতে থাকুন….

দ্বিতীয় মন্তব্যটি তিনি করেন সাম্প্রতি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন,
“পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার সেতুর কাজ আওয়ামী লীগের আমলে শেষ হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না।”

কি, এখনও ভাবছেন তাই না!!একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের চেয়ারপার্সনের জ্ঞানের গভীরতা দেখে অবাক হচ্ছেন নিশ্চই! আমি কিন্তু অবাক হইনি কারণ আমি জানি, সাবমেরিন যে পানির নীচ দিয়ে অর্থাৎ ডুবেই চলে এবং স্প্যান, পিয়ার এগুলি একটির সাথে একটি জোড়া লাগিয়েই যে সেতু তৈরী হয় তা জানার জন্য নূণ্যতম যে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তা একজন অশিক্ষিত মানুষের থাকার কথা নয়। তাছাড়া এবারই প্রথম নয় এর আগেও তিনি এমন অনেক মন্তব্য এবং আত্মঘাতি কাজ করেছেন যা কোন শিক্ষিত মানুষ করতে পারেন না।
আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার (১৯৯৬-২০০১)এর শেষ সময়ে অর্ধেক দামে ১০ হাজার কম্পিউটার নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানি থেকে নেয়ার চুক্তি সম্পাদন করেছিল। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হবার আগেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই তা বাতিল করে দেয়। কারনটা কী ছিলো জানেন?

যাদের মনে নেই, তাদের জন্য বলছি। কারনটা ছিলো- নেদারল্যান্ডের ওই দাতা কোম্পানিটির নাম ছিল “টিউলিপ”। কোম্পানির নামটি কাকতালীয়ভাবে মিলে যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার মেয়ের নামের সাথে। আর শুধু এই কারণেই ওই চুক্তিটি বাতিল করেন বেগম জিয়া। ক্ষতিগ্রস্থ হয় কোম্পানিটি, ফলে তারা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। সেই মামলায় হেরে গিয়ে সেই সময়ে নেদারল্যান্ড সরকারকে ৩২ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। শুধু নামের কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া এমন অসংখ্য প্রকল্প বিএনপি ২০০১ সাথে ক্ষমতায় এসেই বাতিল করে দেয়। তারও পূর্বে বিএনপি নেত্রীর শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবের কারণে নামমাত্র স্বল্প মূল্যে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভাবে তথ্য প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের, পরবর্তীতে সংযুক্ত হতে কয়েকগুণ বেশী মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে । সেই সময়ে যুক্ত হতে পারলে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ আজকের থেকে কয়েকগুণ বেশী এগিয়ে থাকতো। এমন অনেক উদাহরন দেওয়া যাবে যা বেগম জিয়ার শিক্ষা আর জ্ঞানের চরম অভাবকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।এবার আসুন দেখি কোন সময়ে তিনি এই মন্তব্যগুলি করছেন, যখন তিনি ও তার দল প্রায় ১০ বছরেরও অধিক সময় রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার ফলে ইতিমধ্যে তার দল দেশের জনগনের কাছে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। এক ছেলের মৃত্যু এবং অপর ছেলে প্রায় এক যুগ বিদেশে নির্বাসিত, আট বছরে কোন যৌক্তিক ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যার্থ হয়েছে তার দল। আন্দোলনের নামে নাশকতা আর মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মত জঘণ্য কর্মকান্ডের কারণে দেশের মানুষ ও বিদেশে মিত্রদের সমর্থন হারানো, বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা এবং অতিরিক্ত জামাত-নির্ভরতার কারণে সাংগঠিক ভাবে বিএনপি যখন মৃতপ্রায়। জিয়া পরিবারের দূর্ণীতির চিত্র ও জঙ্গী কানেকশন একের পর এক বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, তারেক জিয়ার দূর্ণীতির মামলায় সাজা হওয়া, জিয়া অরফানেজ সহ একাধিক দূর্ণীতির মামলার বিচারের কার্যক্রম শেষের পথে এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এসকল মামলায় তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী আর তা হলে তাকে নিশ্চিতভাবে কারাগারে যেতে হবে। এমনকি আগামী সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়া নিয়েও সংশয় তৈরী হতে পারে।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক মহলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করা, বিশ্বের বড় বড় দেশ এবং দাতা সংস্থাগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পদ্মা সেতুর মত বিশাল প্রকল্প নিজ অর্থায়নে শুরু করে তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া কিভাবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা যায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর বাংলাদেশ এখন স্বনির্ভর দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাড়াচ্ছে, জিডিপি’র ঈর্ষনীয় অগ্রগতি, বৌদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের রেকর্ড, বিদ্যুত ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে এমডিজি অর্জন, ছিট মহল সমস্যা সমাধান ও সমুদ্রসীমা জয়, নারীর অগ্রযাত্রা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য আজ সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর অনেক দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে ক্যারিশম্যাটিক লীডার হিসেবে পরিচিত।

সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুদের নিজ দেশের শুধু আশ্রয়ই নয় তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে যে নজীর স্থাপন করেছেন মানবতার ইতিহাসে তা বিরল। সারা বিশ্বের কাছে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও গণ মাধ্যম থাকে মাদার অফ হিউম্যানিটি, জোয়ান অফ আর্ক, প্রাচ্যের তারকা উপাধীতে ভূষিত করছে। পদ্মার বুকে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, যার নির্মাণশৈলী এবং কারিগরী দিক বিশ্বের সর্বত্র প্রশংসনীয়ও হয়েছে।স্বাভাবিক ভাবেই নিজের এত ব্যার্থতার বিপরীতে শেখ হাসিনার এই ঈর্ষনীয় সাফল্যে বেগম জিয়ার মানসিক অবস্থা ঠিক থাকার কথা নয়।তাছাড়া এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জন করা পিএইচডিধারী ব্যক্তির পক্ষেও মানসিক অবস্থা ঠিক রাখা প্রায় অসম্ভব সেখানে উনি তো একজন অশিক্ষিত বৃদ্ধ মহিলা। সুতরাং উনি এমন মন্তব্য করতেই পারেন তাতে আমি অন্তত অবাক হবো না।তবে আমাকে অবাক করেছে অন্য একটি বিষয় তা হলো, উক্ত অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী ছাড়াও অনেক উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সহ আরও অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি এবং তারা সবাই কিন্তু খালেদা জিয়ার সেই মন্তব্যে মাথা নেড়ে সায় জানিয়েছেন! এই ব্যাপারটি আমাকে শুধু অবাকই করেনি রীতিমত শংকায় ফেলে দিয়েছে!!
ম্যাডামের না হয় বয়স হয়েছে তার উপর নানা মানসিক চাপ, উনার কথা বাদ দিলাম কিন্তু বাকীদের তার কথায় মাথা নেড়ে সায় দেওয়ার ব্যাপারটাকে আপনারা কি বলবেন? একটা দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও যদি এমন অন্ধ হয়, তাদের কাছ থেকে জাতি হিসেবে আমরা ভবিষ্যতে কী আর কতটুকু আশা করতে পারি তা বিচারের ভার আপনাদের উপরেই রইলো।

লেখক:

আনোয়ার হোসেন বিপুল

সাবেক সাধারন সম্পাদক

যশোর জেলা ছাত্রলীগ।

আরো সংবাদ