শেখ রেহানা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বড় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘উনি শুধু আমার বোন না—মা-বাবা, ভাইবোন সব। ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার পর তারা একে অপরের একমাত্র সঙ্গী, বন্ধু এবং দুঃখের সময়ের চোখের জল মুছে দেওয়ার আপনজন।
শেখ রেহানার ওপর অগাধ আস্থা ও ভরসা ছিল বলেই ছেলেমেয়ে সবাইকে লন্ডনে রেখে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা শত বিপদকে তুচ্ছ করে বাংলাদেশে এসে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে নিয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করেন। আর এর পেছনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার মতো অনুকরণীয়ভাবে পর্দার আড়াল থেকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার শাস্তির বিষয়ে বিশ্বজনমত গড়ার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শেখ রেহানা। তিনি নীরবে-নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে। বছরের অনেকটা সময় দেশে থাকলেও যুক্তরাজ্যে কর্মজীবী হিসেবে সম্মানজনক জীবনযাপন করেন দেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রীর বোন এবং শীর্ষ সম্মানিত পরিবারের সদস্য শেখ রেহানা। তার সাদামাটা নিরহংকারী জীবনযাপন সবার কাছে পছন্দনীয়। মানবিক গুণে গুণান্বিত সহজ সরল বাংলার মুখচ্ছবি এ মানুষটির ৬৫তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বামী ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক। তিনি এক ছেলে এবং দুই কন্যার গর্বিত মা। তার বড় ছেলে রিদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি বাংলাদেশের CRI সহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করছেন।
বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের লেবার পার্টির দুইবারের নির্বাচিত পার্লামেন্ট মেম্বার এবং ছোট মেয়ে আজমাইন সিদ্দিক লন্ডনে গ্লোবাল রিস্ক (RISK) অ্যানালাইজার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি শুধু নিজের ছেলেমেয়েদের দিকেই তাকাননি, বড় বোন জননেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে মেয়েদের মানুষ করার ক্ষেত্রে রয়েছে তার অসামান্য অবদান।
তিনি সব সময় বলেছেন, ‘আপা তুই বড়, তুই রাজনীতি কর আর আমি তোর ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করি।’ শেখ হাসিনার ছেলেমেয়েরা আজ বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ICT উপদেষ্টা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ অটিজমের ধারণা সুপ্রতিষ্ঠত করে আজ বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাত্র ২১ দিন আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে যান। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া এসময়ে জার্মানিতে কর্মরত থাকায় শেখ রেহানা বোনের বাসায় বেড়ানোর উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলেন। সে সময়ে তারা দেশে থাকলে হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন রকম হতো। আল্লাহ’র রহমতে তারা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান।
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বেলজিয়ামে গিয়েছিলেন এবং ১৫ আগস্ট তত্কালীন রাষ্ট্রদূত জনাব সানাউল হকের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির কন্যা হিসেবে তারা সেখানে অত্যন্ত সমাদরে ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সময় খুব ভোরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সেই রাষ্ট্রদূত তাদের বোঝা হিসেবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য জার্মানিতে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীকে অনুরোধ জানায়। দেবদূতের মতো হয়ে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী বেলজিয়াম সীমান্তে গাড়ি পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে তার বাসায় নিয়ে আসেন। এরপর শুরু হয় পিতৃ-মাতৃহীন দুই বোনের অনিশ্চিত কঠোর সংগ্রামী জীবন।
১৯৮১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের পথ সহজ ছিল না। এ সময়ে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে শেখ রেহানা শেখ হাসিনাকে সাহস জুগিয়েছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। ১/১১-এর সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যে বিভক্তিকরণ দেখা দিয়েছিল তা রুখতেও শেখ রেহানা বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সে সময়ে পর্দার আড়াল থেকে দলের ঐক্য বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। নিরহংকারের অন্যতম উদাহরণ শেখ রেহানা। পাবলিক গাড়িতে নিজের অফিসে যাওয়া আসার খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি। কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে সততার এক বিরল দৃষ্টান্ত। শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যই সবাইকে আপন করে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতার অধিকারী। তিনি রাজনীতির ফ্রন্টলাইনে না আসলেও রাজনীতির অন্তর্নিহিত হালচাল ভালোভাবেই বুঝেন এবং পিতার মতোই এদেশের মানুষকে ভালোবাসেন।
শেখ রেহানা জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তার বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগলে রাখেন এবং সঠিক পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে থাকেন। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ শেখ হাসিনা যে বহুমাতৃক অবদানের ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছেন, তার পেছনে শেখ রেহানার অবদান বঙ্গমাতার অন্যরূপে পর্দার আড়ালে আশীর্বাদ হয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বহু গুণে গুণান্বিত বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা প্রতিটি ক্ষেত্রে তার বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে সুখে-দুঃখে এক হয়ে কাজ করেছেন এবং করে যাবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ প্রত্যাশা আজ প্রতিটি প্রগতিশীল বাঙালির মনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তিনি শেখ হাসিনার অদম্য অগ্রযাত্রার উন্নয়নকে সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন ৬৫তম জন্মদিনে এটি আমাদের একান্ত কামনা। শেখ রেহানার এই শুভ জন্মদিনে আবারও ফুলেল শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।