আজ - শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - বিকাল ৩:২২

আ. লীগের প্রবীণ অসহায় নেতাকর্মীর তালিকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক:

সারা দেশে আওয়ামী লীগ এবং এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ‘প্রবীণ ও অসুস্থ’ নেতাকর্মীদের নামের তালিকা করে ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, কিছু পাওয়ার আশা না করেই একসময় আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী সংগঠনের জন্য সময়, অর্থ, সহায়-সম্পদ ব্যয় করেছেন—এমন হাজারো ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন দেশের অন্যতম প্রাচীন এই দলের তৃণমূল স্তরে। বিশেষ করে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়ে সারা দেশে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ওই সব ত্যাগী নেতাকর্মীকে সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়ন করার জন্য তাঁদের নাম-ঠিকানা চেয়ে দলের জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা ওই চিঠি পাঠানো হয় গত ৩ জুলাই।

কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, সংগঠনের চরম দুর্দিনে তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মী বিভিন্ন বৈরী সরকারের নির্যাতনের মধ্যেও মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে সজিব রেখেছিলেন তাঁদের অবদান মূল্যায়নের উদ্যোগ যেকোনো দলের জন্য শুভদিক। তাঁদের মতে, যাঁদের রক্ত, শ্রম, অর্থ ও ত্যাগের বিনিময়ে আজকের আওয়ামী লীগ সেই নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হলে সংগঠনের ভিত আরো সুদৃঢ় হবে। একই সঙ্গে দলের প্রতি বর্তমান নেতাকর্মীরা আরো আন্তরিক হবে।

সংগঠনের ‘প্রবীণ অসহায় ও অসুস্থ’ নেতাকর্মীদের তালিকা চাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশে এটা করা হচ্ছে। নেত্রীর সিদ্ধান্ত হচ্ছে, একসময়ের ত্যাগী অথচ বর্তমান সময়ে অনেকটা অবহেলিত প্রবীণ, অসহায়, অসচ্ছল, অসুস্থ এ ধরনের নেতাকর্মীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য সাংগঠনিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবশ্য এর আগে নেত্রী ব্যক্তিগতভাবে অনেক নেতাকর্মীকে চিকিৎসা সহায়তাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। আমি নিজেও অনেক নেতাকর্মীকে সহযোগিতা করেছি।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যেসব মানুষ একসময় সংগঠনের চরম দুর্দিনে দুঃসময়ে বিভিন্ন বৈরী সরকারের জুলুম নির্যাতন সহ্য করে দেশের প্রত্যন্ত স্তরে বঙ্গবন্ধুর বাণী ধারণ করে দলের আদর্শ ও চেতনাকে সমুন্নত রেখেছিলেন তাঁদের আমরা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ এ ব্যাপারে জেলা উপজেলা নেতাদের কাছে একটা সার্কুলার পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ওই নির্দেশনাসংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসংক্রান্ত চিঠি এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছি। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাংগঠনিক নেতাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে এমনিতেই সভানেত্রী এ ধরনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। এখন হয়তো বৃহত্তর পরিসরে চিন্তা করা হয়েছে।’

সাধারণ সম্পাদকের সই করা চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দেশের উপজেলা ইউনিয়নে বসবাসকারী সংগঠনের ত্যাগী অসচ্ছল নেতাকর্মীদের বাড়িঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একইভাবে গত ২০ মে গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় আবারও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে।’ সালাম বলেন, সাংগঠনিকভাবে এ ধরনের নামের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ইউনিট পর্যায়ের নেতাদের সম্পূর্ণ সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা প্রকৃত সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

‘প্রবীণ অসহায় ও অসুস্থ’ নেতাকর্মীদের নামের তালিকা করার উদ্যোগ প্রসঙ্গে ১৯৭৯-৮১ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী আবদুল মান্নান বলেন, ‘নিঃসন্দেহে উদ্যোগটা ভালো। এতে করে ত্যাগী কর্মী সৃষ্টি হবে। কর্মীরা সংগঠনের প্রতি নিবেদিত হবে। সংগঠনের ভিত্তি আরো মজবুত করবে। তবে নামের তালিকা প্রস্তুতের সময় বর্তমান নেতাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে।’

বোয়ালখালী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন বিষয়টিকে দেখেছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্তধারা প্রবাহমান। স্বভাবতই তিনি গণমানুষের জন্য কাজ করবেন। তাই তিনি দলের একসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর এ উদ্যোগ সংগঠনের ভিত্তি আরো মজবুত করবে। আগামী দিনে সংগঠনে ভালো নিবেদিতপ্রাণ কর্মী সৃষ্টি হবে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আকবর চৌধুরী বলেন, যেসব মানুষ একসময় নিঃস্বার্থভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন কিন্তু আজ অনেকটা অসহায় তাঁদের মূল্যায়ন করা বর্তমান নেতাদের নৈতিক দায়িত্ব।

ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘দলের একসময়ের ত্যাগী নেতা, আজ যাঁরা বার্ধক্য, অসুস্থ কিংবা অসচ্ছলতায় রয়েছেন তাঁদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে—এটা নেত্রীর ব্যাপার। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এ ধরনের একটা পদক্ষেপ আমাদের মতো তরুণ কর্মীদের সংগঠনের প্রতি আরো বেশি নিবেদিত হতে অনুপ্রাণিত করবে।’

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত