আজ - বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ১১:৫২

উত্তর কোরিয়ার বোমাটি রুশ-মার্কিন পরমাণু বোমার মতো শক্তিশালী?

খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক : উত্তর কোরিয়া বলছে তারা রোববার যে পারমাণবিক বোমাটি পরীক্ষা করেছে সেটি হাইড্রোজেন বোমা অর্থাৎ যেটি ধ্বংসক্ষমতার বিচারে সাধারণ পারমাণবিক বোমার চেয়ে কয়েক গুণ শক্তিধর।

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে রাজী হচ্ছেন না যে বোমাটি হাইড্রোজেন বোমা। তবে তারা একযোগে স্বীকার করছেন, এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া যতগুলো পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে, এটি ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিধর।

 

মাটির নিচে দশ কিমি গভীরে এই বিস্ফোরণের পর রিক্টার স্কেলে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে যা পার্শ্ববর্তী চীনের বেশ কিছু এলাকাতেও ভূকম্পনের সৃষ্টি করে।

বিস্ফোরণের পর ভূকম্পনের মাত্রা বিবেচনা করে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষা করা বোমাটির শক্তি ছিল ১০০ কিলোটনের মতো।

 

অর্থাৎ ১৯৪৫ সালে জাপানের নাগাসাকি শহরে আমেরিকার যে পারমাণবিক বোমা তাৎক্ষনিক ৭০,০০০ মানুষের জীবন নিয়েছিল, উত্তর কোরিয়ার আজকের বোমটির শক্তি তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি।

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ভিপিন নারাং ব্লুমবার্গ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, বোমাটি হাইড্রোজেন বোমা হোক আর না হোক, এটি দিয়ে আমেরিকার যেকোনো বড় একটি শহর পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা সম্ভব।

এখন পর্যন্ত ভয়াবহতম পারমাণবিক পরীক্ষা ছিল রাশিয়ার।

 

উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষা করা বোমাটি যদি হাইড্রোজেন বোমা হয়ও, তার পরও এখন পর্যন্ত বিশ্বে ভয়াবহ যেসব পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর সাথে এটির তুলনা কতটা করা যায়?

এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে মানুষের সৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল ১৯৬১ সালে যখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘জার বোমবা’ বা ‘বোমার রাজা’ নামে একটি পারমানবিক বোমা পরীক্ষা করে।

ঐ হাইড্রোজেন বোমার শক্তি ছিল ৫০,০০০ কিলো টন।

আর্কটিক অঞ্চলে নোভায়া জেমলিয়া নামে দ্বীপপুঞ্জের যে জায়গায় ঐ দানবীয় বোমাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল, তার ৩৫ মাইলের মধ্যে সমস্ত ভবন, স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এমনকী শত শত কিলোমিটার দুরেও ভবনে ক্ষতি হয়েছিল। ফিনল্যান্ড, নরওয়ের মতো অনেক দুরের দেশগুলোতেও বহু বাড়ির জানালার কাচ ভেঙ্গে পড়েছিল।

তবে বিশ্বের প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫২ সালে, প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপে। সেটির শক্তি ছিল ১০,০০০ কিলোটন।

৫০ কিমি দূরে একটি জাহাজে বসে সেই পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন মার্কিন একজন পদার্থ বিজ্ঞানী হ্যারল্ড অ্যাগনিউ। তিনি পরে বলেছিলেন – “অত দূরে বসে যে তাপ সেদিন বোধ করেছিলাম তা জীবনেও ভুলবো না। ক্রমাগত তাপ আসছিল। ভীতিকর এক অভিজ্ঞতা ছিলো সেটি।”

পরীক্ষার পর ধোঁয়ার কুন্ডুলি ৫০ কিমি উপরে উঠে গিয়েছিল, ছড়িয়ে পড়েছিল ১০০ কিমি পর্যন্ত।

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক পরীক্ষা ছিল ১৯৫৪ সালে ঐ মার্শাল দ্বীপেরই বিকিনি অ্যাটল এলাকায়। শক্তি ছিল ১৫০০০ কিলোটন। পরীক্ষার পর ১১,০০০ কিমি পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিলো।

শত শত বহু মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো, যারা আর কখনই বাড়িতে ফিরতে পারেনি।

 

এর আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বানানোর দাবি করে সেটা আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজনের পরই প্রবল ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

 

আমেরিকার চোখ রাঙানি। আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। ‘বন্ধু’ চীনের চাপ। এসব কিছু হেলায় উড়িয়ে ষষ্ঠ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটাল উত্তর কোরিয়া। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।

 

‘ইউএসজিএস’ নামের ভূকম্পন বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছে। যার ফলে প্রচণ্ড ‘শক ওয়েভ’ তৈরি হয়েছে। ‘রিখটার স্কেলে’ ওই কম্পনের মাত্র ৬.৩ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। দক্ষিণ কোরীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১২.৩৬ নাগাদ একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের উৎস উত্তর কোরিয়ার হামগ্যং প্রদেশ। ওই ভূমিকম্পটি প্রাকৃতিক কারণে ঘটেনি। কোনও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও বিস্ফোরণই ওই ভূমিকম্পের জন্য দায়ী। ভূমিকম্পের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক। অনেকেই ‘বম্ব শেল্টারে’ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

 

ইতিমধ্যে ‘হাইড্রোজেন বোমা’ বানানোর দাবি করেছেন কিম জং উন। তারপরই এমন ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ও ভূমিকম্পে তার কথা সত্য বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোরীয় উপসাগরীয় অঞ্চল একটি ‘টাইম বম্ব’ বলেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, যেকোনও মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। আর তা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা একপ্রকার বেজে উঠবে।

 

এবার ফের পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক করে তুলেছেন কিম। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে মার্কিন ও উত্তর কোরীয় সামরিক কর্তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে জরুরি বৈঠক। কীভাবে পিয়ংইয়ংকে বাগে আনা যায় তাই নিয়ে চলছে আলোচনা।

 

 

উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে কিমের সেনা। জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায় উত্তর কোরিয়ার ছোড়া ওই মিসাইলটি। জাপানি ব়্যাডারে ক্ষেপণাস্ত্রটি ধরা পড়তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তবে কোনো ক্ষতি না করে অবশ্য মাঝ সমুদ্রে আছড়ে পড়েছিল ওই মিসাইলটি। তারপরই কমিউনিস্ট দেশটিকে কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তবে কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা যুদ্ধবাজ কিমকে। তার পদক্ষেপ প্রতি মুহূর্তে উসকে দিচ্ছে যুদ্ধের আশঙ্কা।

 

আরো সংবাদ