আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:১৪

এবার নুরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় ওই মামলা হলেও শনিবার তা জানাজানি হয়। ঢাবির জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক অর্ণব হোড় ওই মামলা করেন। তিনি ওই হল ছাত্র সংসদের বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদকও।

মামলায় নুরের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে মিথা তথ্য প্রচার করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবমানা, মানহানি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। যে ফেসবুক পেজ থেকে এই ধরনের তথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেই পেজের লিঙ্ক, স্ক্রিনশর্ট এবং ফেসবুক লাইভের ভিডিও সিডি এজাহারের সঙ্গে জমা দিয়েছেন বাদি।

ধানমণ্ডি থানা পুলিশ জানায়, এজাহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৫,২৬, ২৯ এবং ৩১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটনানোর উদ্দেশে ফেসবুকে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করার অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ মামলাটি তদন্ত করছে।

এজাহারে বাদি অভিযোগ করেছেন, নুরসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ফেসবুক পেজ থেকে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগকে জড়িয়ে দাবি করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এই সময়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। লাইভে ছাত্রলীগকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ত্রাস, ভিন্নমতের ওপর প্রতিনিয়ত হামলাকারী ও চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী হিসেবে অপপ্রচার চালানো হয়।

এজাহারে বলা হয়, নুর ফেসবুক লাইভে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসকে ভারতীয় ‘র’ এর এজেন্ট ও ইসকন সদস্য বলেও অপপ্রচার চালান। লাইভে তিনি দাবি করেন, ‘ঢাবি ছাত্রলীগের সভাতি সঞ্জিত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম এবং তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী মঞ্চের সভাপতি বুলবুল ও মামুনের নেতৃত্বে তাকে হত্যাচেষ্টায় তিন দফা ডাকসুতে হামলা করা হয়।’ নুর লাইভে আওয়ামী লীগকে লুটেরা, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী উল্লেখ করে আপত্তিকর প্রচারণা চালিয়ে বলেন, দেশকে মুক্ত করতে, জনগণকে বাঁচাতে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গতে তুলুন। ‘হাসপাতাল থেকে ছাত্রসমাজ তথা দেশবাসীর প্রতি ভিপি নুরের আহবান’ নামে এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, একই পেজ থেকে নুরের অনুসারী মুহাম্মদ রাশেদ খান ‘আমাদের মাথা কেটে আলাদা করে ফেলেছে’ বলেও মিথ্যা তথ্য প্রচার ও গুজব ছড়ানো হয়।

মামলার বাদি অর্ণব হোড় জানিয়েছেন, নুর যখন সাইবার স্পেস ব্যবহার করে ফেসবুকে এই ধরনের উস্কানিমূলক মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাইভ করছিলেন, তখন তিনি ধানমণ্ডিতে ছিলেন। এজন্য ওই থানায় মামলা করেছেন। আসামি লাইভে গুজবের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও সংগঠনের নেতাদের নিয়ে উস্কানি ও বিদ্বেষ ছড়ানো পাশাপাশি মানহানিকর প্রচারণাও চালিয়েছেন। ছাত্রলীগের একজন নেতা হিসেবে এজন্য তিনি আইনগত প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছেন।

পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের ডিসি আ ফ ম আল কিবরিয়া সমকালকে বলেন, ধানমণ্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের ওই মামলার তদন্ত করবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। শিগগিরই এর তদন্ত শুরু হবে।

গত রোববার দুপুরে ডাকসু ভবনে ভিপি নুর নিজের কক্ষে অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক করার সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে নুরসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই ঘটনায় শুরুর দিকে নুর মামলা না করায় পুলিশ বাদি হয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় সংগঠনটির তিন নেতা আল মামুন, কেন্দ্রীয় নেতা মেহেদী হাসান শান্ত ও ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় ভিপি নুর বাদি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৩৭ জনের বিরদ্ধে অভিযোগ দেয়। সেটি আলাদা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না হলেও আগের এজাহারের সঙ্গে সংযুক্ত করে তদন্ত করছে ডিবি।

এদিকে একই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মী ডিএম সাব্বির হোসেন ভিপি নুরসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলাতে হত্যাচেষ্টা ও মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরো সংবাদ