জহির রায়হান ও আব্দুল বারী: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর এক ঝাঁক তরুণ নেতা। নির্বাচনী এলাকায় সরকারের উন্নয়নকাজের প্রচার, কর্মিসভা, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁরা দলের নীতিনির্ধারকদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।
তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনের নৌকার টিকিট পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য।
বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেক তরুণ নেতা এবং ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছেন। এমন বেশ কয়েকজন নেতাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান খানজাহান আলী24/7 কে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনেক উদ্দেশ্যের অন্যতম হলো তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো। এখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি আসনে ১০-১৫ জন করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এঁদের মধ্যে অনেক তরুণ আছেন, এটা আমাদের রাজনীতির জন্য শুভ লক্ষণ। এঁদের মধ্যে অনেক নারী আছেন—এটাও আমাদের জন্য শুভ লক্ষণ। এই প্রত্যাশী তরুণদের অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন, অনেকে চাইবেন না।
কারণ তাঁরা মাঠে নেমে নিজেদের জনপ্রিয়তার অবস্থা বুঝে যাবেন। তাঁরা হয়তো আগামী দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন। যাঁরা মনোনয়ন চাইবেন এঁদের মধ্যে থেকে জনপ্রিয়তা, এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। ’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন খুলনা-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলেছেন। এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও গণমাধ্যম জরিপে কামাল হোসেনের পক্ষে জনমত প্রায় শতভাগ। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুডবুক সহ মনোনয়ন বোর্ডের আলোচনায়ও স্বরব উপস্থিতি রয়েছে কামাল নামটির।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আলম পাঠান ময়মনসিংহ-৭ আসনে মনোনয়ন চান।
যুবলীগ : যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আলোচিত এক-এগারোর সময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই রায়পুরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন হারুন।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ঢাকা-১২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিগত দুই নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তৃণমূল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে উঠে আসা আনোয়ার নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। গত কয়েক বছরে কর্মিসভা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এলাকায় বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছেন আনোয়ার।
যুবলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটনের সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লিটন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সদস্য। লিটনের বাবা আবদুল মতিন মোহন শাহজাদপুর উপজেলার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। মোহন বেশ কয়েকবার স্থানীয় সরকারের একাধিক নির্বাচনে জয়লাভ করেন। লিটন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়। সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই পল্টন, মতিঝিল এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন।
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নাসিম আহমেদ পাভেল ঢাকা-১৯ আসনে মনোনয়নের জোরালো দাবিদার। পাঁচ বছর ধরে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ মানিকগঞ্জ-২ আসনে, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মইনুল হোসেন খান নিখিল ঢাকা-১৫ আসনে এবং সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তাঁরা নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ : স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়ন চান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু রাজবাড়ী-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি টিপু এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় তরুণ নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
যুব মহিলা লীগ : যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন চান। যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি নাটোর-৪ আসনে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন ডলি পিরোজপুর-৩ আসনে, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন ঢাকা-১৪ আসনে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। এই তিন নেত্রী এরই মধ্যে নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছেন।
মনোনয়ন পেতে নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনের সহসভাপতি কেশোয়ারা সুলতানা সালমা। তিনি ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি শামীমা চৌধুরী বীথি, সহসভাপতি ইয়াসমিন আক্তার পপি মনোনয়নপ্রত্যাশী। সংগঠনের তরুণ বেশ কয়েকজন নেতাও মনোনয়নপ্রত্যাশী। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূপুর খানম দুলি বরিশাল-২ আসনে, সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পারভীন খানম মিশু ফরিদপুর-১ আসনে, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী শারমিন সুলতানা তনমী লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মনোনয়ন চান। সহবিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পাদক তানিয়া সুলতানা হ্যাপিও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
অন্যান্য সহযোগী সংগঠন : অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বাসেত মজুমদার ঢাকা-১৭ আসনে, তাঁতী লীগের কার্যকরী সভাপতি সাধনা দাশ গুপ্তা কক্সবাজার-৪ আসনে এবং কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি এম এ করিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে মনোনয়ন চান।