আজ - বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:২৬

কে হচ্ছেন শেখ হাসিনার রানিংমেট?

আবুল বারাকাত (যশোর থেকে) :: রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগের ২১ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী শুক্রবার। দলীয় প্রধান ও সর্বোচ্চ নেতারা বলছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরু দায়িত্ব পালন করা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা, যারা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে বুক চিতিয়ে লড়েছেন তাদের মধ্যে থেকেই দলের নেতা নির্বাচন করা হবে।

দলের নেতারা বলছেন, দলীয় প্রধান হিসেবে বরাবরের মতই থাকছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তবে পরিবর্তন আসতে পারে সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি অনেক পদেই। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই দলের দায়িত্ব থেকে সরে যাবার আভাস দিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

অপরদিকে দলীয় প্রধান বারবার বলেছেন, সরকার ও দলকে আলাদা করার কথা। ফলে ওবায়দুল কাদের একই পদে পুণঃরায় না আসলে দায়িত্ব পাবেন সরকারের বাইরে থাকা কোন নেতাই। দলের ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক গুঞ্জন।

কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির রানিংমেট? বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও সুযোগ না থাকায় যেসব নেতা মূল দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পাননি কিন্তু বিভিন্নভাবে দলের সঙ্গে থেকে কাজ করে গেছেন নিভৃতে। তাদেরকেই মুল্যায়িত করা হবে আগামী সম্মেলনে।

ফাইল ছবি :: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

এদের মধ্যে যারা এগিয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম দলের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। আওয়ামী লীগের এই নেতার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি নবম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে। ১৯৭৩ সালে তিনি ফরিদপুর ইয়াসিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালে একই সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য, ১৯৮৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে ফরিদপুর-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেন।

ফাইল ছবি: আ’লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক

আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, দলের সভাপতি তার রানিংমেট হিসেবে যে কাউকেই বেছে নিতে পারেন। এতে আব্দুর রহমান ছাড়াও আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তবে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম। আওয়ামী লীগে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। এসময় তিনি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রথমবারের মতো দিনাজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ১৮তম জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালে জাতীয় কাউন্সিলে দ্বিতীয়বারের মত সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার একই আসন হতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১১শ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বার দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ উপজেলা) আসন হতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ফাইল ছবি :: আ’লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি

এছাড়া ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম গত সম্মেলনের সময়ও আলোচনায় ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন। দুই মেয়াদে মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তিনি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের; যদিও কাউন্সিলররা বরাবরই এ দায়িত্ব তুলে দেন সভাপতি শেখ হাসিনার কাঁধে। তাই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। এদিকে আওয়ামী লীগের অতীত কমিটিগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায় দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে সবসময়ই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচবার দায়িত্ব পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীন আহমদ এ পদে ছিলেন তিনবার। জিল্লুর রহমান ছিলেন চারবার। এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক দুবার, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুবার, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক একবার, আবদুল জলিল ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একবার। এর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ১৯৮২ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বাকশালে যোগ দিলে সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

আরো সংবাদ