আবুল বারাকাত :: লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন লোক ঠকিয়ে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে মাদকসেবীদের মাথায় হাত রেখে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে, সরকারী জায়গা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করছেন তিনি। তার ভয়ে পাওনাদাররা নিশ্চুপ। ইউনিয়নে একক আধিপত্য বিস্তারের নেশায় সবাইকে দাবিয়ে রেখে দাপুটে জীবনযাপন করছেন চেয়ারম্যান মিলন।
যশোরের সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে সরকারি বিদ্যালয়ের জমিতে একক সিদ্ধান্তে স্থাপনা নির্মান এবং নিজের জমিতে নিজ বাবা ও চাচার নামে কলেজ স্থাপনের নামে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে জনপ্রতি লক্ষ্যাধিক নগদ টাকা লুফে নেওয়া সহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে খান জাহান আলী 24/7 নিউজের লেবুতলা ইউনিয়ন প্রতিনিধির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মিলন চেয়ারম্যানের আসল রুপ।
জানা যায় চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলনের বাবা ও চাচার নামে প্রতিষ্ঠিত মতিয়ার রহমান ও হাজি আতিয়ার রহমান কলেজ এখন লেবুতলা ইউনিয়নের সবথেকে আলোচিত প্রসঙ্গ। অভিযোগ উঠেছে বাবা ও চাচার নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা শুনিয়েই শিক্ষক নিয়গের ওছিলায় নিয়োগ প্রাপ্ত প্রতিজন শিক্ষক/শিক্ষিকার কাছ থেকে লক্ষ্যাধিক নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পথে বসিয়েছেন তাদেরকে। অনুসন্ধানে জানা যায় স্থাপিত কলেজের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা এখনও কলেজের নামে রেজিস্ট্রি হয়নি।
একই ভাবে দলেননগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর ছবুরের অনুমতি ছাড়াই দলেননগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে একটি লাইব্রেরী স্থাপন করেছেন চেয়ারম্যান মিলন। লাইব্রেরীর নামও দিয়েছেন বাবা ও চাচার নামে। প্রথমে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে লাইব্রেরীর কার্যক্রম চললেও পরে ঐ বিদ্যালয়ের জমিতেই একক সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষক বা সভাপতির অনুমতি ছাড়াই চলছে নতুন ঘর তৈরির কাজ।
অনুসন্ধানে জানা যায় ইতিমধ্যে মিলন চেয়ারম্যান চাকরি দেওয়ার বাহানায় কৌশলে নগদ টাকা লুফে নিঃস্ব করে পথে বসিয়েছে প্রায় ২০ টি পরিবারকে। লেবুতলা ইউনিয়ন, এমনকি কালিগঞ্জ উপজেলার ভুক্তভোগী মানুষগুলোর লুকানো আত্বচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে এসব অঞ্চলের আকাশ বাতাস। সকলের মধ্যে এক চাঁপা ভয়! সত্য বললেই জীবনণাশের ভয়ে চুপ থাকছেন ভূক্তভোগীরা।
অভিযোগ উঠেছে ক্লিন ইমেজধারী আলিমুজ্জামান মিলন মাদক বিক্রেতাদের মাথায় হাত রেখে তাদের ব্যাবসা প্রসারে জোরদার ভুমিকা রাখেন। চেয়ারম্যান তার ভাই কাটামারা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী তারেকুজ্জামান রিপনকে দিয়ে মার্ডার, ডাকাতি, নারী নির্যাতন সহ ১৮ মামলার আসামী মাদক সম্রাট খাইরুলকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় মাদক ব্যাবসা পরিচালনা করেন। মাদক সম্রাট খাইরুল সহ চেয়ারম্যানের ভাই এবং তার পোষা বিভিন্ন মামলার আসামীদের ভয়ে জমি জায়গা, ভিটাবাড়ী বিক্রি করে চাকরির ফাঁদে পড়ে মিলনকে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা দিলেও সকলে চুপচাপ থাকছেন।
কালিগঞ্জের তত্তিপুরের মো: এমরানুর রহমানকে ইসলামিক হিস্ট্রি লেকচারার পদে চাকরি দেওয়ার ছলে চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন লুফে নিয়েছেন নগদ ১০০০০০ (এক লক্ষ টাকা) টাকা।
এমরানুর রহমান বলেন, “ টাকা দেওয়ার সময় লুচিয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর ইসারত উপস্থিত ছিলেন। ২০১৩ সালে নগদ টাকা দেওয়ার পর ০৬ বছর পেরলেও আমি এখনও টাকাগুলো ফেরত পায়নি। চেয়ারম্যান মিলনের কাছে পাওনা টাকার দাবী নিয়ে গেলে এখনও তিনি কলেজ হবে এবং চাকরি হবে বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন।“
একইভাবে একতারপুরের মোছা: শরিফা খাতুনকে বাংলা বিভাগে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে মিলন চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিয়েছেন ১,৩০০০০ (একলক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা)।
শরিফা বলেন,“ নিজের টাকা খারচ করে দীর্ঘদিন কলেজে পায়ে হেটে গিয়ে ক্লাস করিয়েছি। আমার টাকা নিয়েছে মিলন চেয়ারম্যান, টাকা দেওয়ার সময় গ্রামের ফয়েজ, রুবেল এবং ইমরান ছিলো। ০৪ বছর আগে আমার থেকে টাকা নেওয়ার পর আমি দুই বছর ক্লাস করালেও এখন আমার চাকরিও নেই, আমার টাকাও আমি ফেরত পাইনি। আমি আমার টাকা ফেরত পেতে চাই।“
নিজ ইউনিয়ন লেবুতলার পরানপুর গামের আবু তাহেরের ছেলে আব্দুল হালিমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব দিয়ে চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন হাতিয়ে নিয়েছেন ১,৩০,০০০ (এক লক্ষ্য ত্রিশ হাজার টাকা) প্রথমে তাকে ( আব্দুল হালিম) ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষকের চাকরি দেওয়া হলেও পরে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আব্দুল হালিম বলেন, “আমি ভয়ে টাকা চাইতে পারিনি। ঐক্যবদ্ধ ভাবে টাকা চাইতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিলেও অনেকে ভয়ে পিছিয়ে গেছে।“
লেবুতলা ইউনিয়নের কাঠামারা গ্রামের ইসাহাক আলী মোল্যার ছেলে ফয়েজ উদ্দীনকে কিলার্ক পোষ্টে দীর্ঘ ০২ বছর চাকরি করেও মেলেনী বেতন ও স্থায়ী চাকরি। চেয়ারম্যান মিলন লুফে নিয়েছে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা।
ফয়েজ উদ্দীন বলেন, “আমার চাকরির জন্য ৩০০০০০ (তিনলক্ষ্য) টাকার কথাবার্তা হলেও আমি চেয়ারম্যান মিলনের কাছে নগদ ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা দিয়েছি। আমি আমার টাকা ফেরত চায়।“
এছাড়াও চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন দলেননগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজেস্ব জমিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা সভাপতি কারও সাথে কোন রকম পরামর্শ ছাড়াই ঘর তৈরি করছেন।
এ বিষয়ে দলেননগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর ছবুর খান জাহান আলী 24/7 নিউজ প্রতিনিধিকে বলেন, “ চেয়ারম্যান যা করেন নিজের ইচ্ছাতেই করেন। এর আগে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে নিজের বাবা ও চাচার নামে লাইব্রেরী স্থাপন করেছেন।
সেখানে লাইব্রেরীর কোন কাজ হয় না। লাইব্রেরীর নামে তিনি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নিজের শালিশ বিচারের অফিস বানিয়েছেন।এখন আবার নিজ খরচেই কারও অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয়ের জমিতে নতুন ঘর তৈরি করছেন তিনি। আমার বিদ্যালয়ের ভাঙা প্রাচিরের ইট আমি ফেরত পায়নি, চেয়ারম্যান ইটগুলো নিজের কাজে লাগিয়েছে।আমি একবার প্রতিরোধ করতে গেলেও কোন লাভ হয়নি।”
এলাকায় এসি গাড়িতে ঘোরা ক্লিন ইমেজের মিলন, ভদ্র ইমেজ বা স্বচ্ছ চরিত্রের চেয়ারম্যান মিলন চাকরি দেওয়ার নামে জন প্রতি লক্ষ্যাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান অভিযোগের ভিত্তিতে খান জাহান আলী 24/7 নিউজের লেবুতলা ইউনিয়ন প্রতিনিধির অনুসন্ধানে তথ্য নির্ভর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য এছাড়াও চেয়ারম্যান আলিমুজ্জাম ইতিমধ্যে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ভবন হাকিয়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন নতুন প্রি ক্যাডেট স্কুল। অভিযোগ আছে সরকারী/স্কুল কলেজের জায়গাতেই উঠেছে বিভিন্ন ভবন।