শাহ্ জালাল,স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী আরমাত্র একমাস পরেই আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু খুলনা-২ আসনে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা জমে উঠেছে। খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। উভয় দলই জিততে চায়। প্রার্থীরা প্রতিদিন একাধিক কর্মসূচীতে যোগ দিচ্ছেন এবং আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর বাইরে সিপিবি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। তবে এটা বলা যায় যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে । স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ বারি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের খান এ সবুর, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মো. মহসিন, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মিয়া মুসা হোসেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে পুনরায় শেখ রাজ্জাক আলী, ২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, তিনি এ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে মোহাম্মদ আলী আসগর লবী, ২০০৮ সালে খুলনা মাহানগর বিএনপি‘র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও এ তালিকায় বিএনপি’র একজনের নামই রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এবং খুলনা সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডঃ সাইফুল ইসলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাতুষ্পুত্র সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের ছোট ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপি’র একমাত্র প্রার্থী খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও সিপিবি’র এসএ রশিদ এ আসনে স্ব স্ব দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে খুলনা মাহানগর বিএনপি‘র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ৯০ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান পেয়েছিলেন ৮৯ হাজার ২৮০ ভোট। ব্যবধান ছিল মাত্র ১ হাজার ৬৭০ ভোট। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিগত পাঁচ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে আমি খুলনার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সাধ্যমত কাজ করেছি। সকল উন্নয়নে আমার ভূমিকা রয়েছে। খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার সকল এলাকার মানুষের সাথে আমার নাড়ীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন ও ভিশন বাস্তবায়ন আত্মনিয়োগ করব। খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল যদি অংশ নেয় এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব। তিনি বলেন, একজন জন প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা, জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে দুর্নীতি মুক্তা রাখা। আমি নির্বাচিত হলে খুলনা শহরকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করে শান্তির শহরে পরিণত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব । খুলনা সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় দলীয় সকল নেতাকর্মী এবং সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত সব ধরনের প্রস্তুতিও আমার আছে। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে খুলনাকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থাশীল। তিনি আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে নৌকা যাকে দেবেন আমি তার পক্ষে কাজ করব। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি নির্বাচিত হলে খুলনাকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করার চেষ্টা চালাব এবং মানুষের অধিকার আদায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে নাগরিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করবো।