আজ - শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - বিকাল ৪:০৪

নতুন কমিটি ছাড়া আন্দোলনে অনীহা ছাত্রদলের!

বাড়ছে পদপ্রত্যাশীদের ক্ষোভ-হতাশা

রাজকুমার নন্দী : গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দাবি আদায়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে স্বল্পকালীন কঠোর আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। আর আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির মূল ভরসা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সর্বশেষ দুটি আন্দোলনসহ বিগত বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা রাজপথে থেকে তার প্রমাণও দিয়েছেন। তবে নতুন কমিটি ও নেতৃত্ব ছাড়া এবার রাজপথে নামতে যথেষ্ট অনীহা রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলা ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতার। তারা সংগঠনের নতুন নেতৃত্বের অধীনে  আন্দোলনে নামতে চান। ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের শঙ্কা, আন্দোলন শুরুর আগে নতুন কমিটি ঘোষিত না হলে বর্তমান নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা আর সংগঠনটির শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। কারণ, আন্দোলনপরবর্তী সময়ে কমিটি হলে রানিং স্টুডেন্টস অথবা ছাত্রলীগের মতো অনুর্ধ্ব ত্রিশ বছর বয়সী নেতাদের দিয়ে সেই কমিটি গঠন করা হতে পারে। ফলে জীবন বাজি রেখে রাজপথের আন্দোলনে থাকলেও সেই কমিটিতে তারা আর স্থান পাবেন না। তখন তাদেরকে হয় যুবদল বা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য কিংবা সহ-সম্পাদকের পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে নতুবা পরবর্তী কমিটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী অনেক নেতার সাথে আলাপ করে তাদের এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে। তবে তাদের কেউ এ ব্যাপারে উদ্ধৃত হয়ে কথা বলতে রাজী হননি।

ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা দৈনিক করতোয়াকে জানান, আন্দোলন সামনে রেখে অবিলম্বে তারা নতুন কমিটি চান। তবে শেষপর্যন্ত কমিটি না হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে তারা অবশ্যই রাজপথে নামবেন। তবে সেটা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব মেনে তাদের অধীনে নয়। বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে তারা আর মানেন না। এক্ষেত্রে পৃথকভাবে আন্দোলনে নামবেন তারা।

রাজীব আহসানকে সভাপতি এবং আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৬ সদস্যের বিশাল আকৃতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর মেয়াদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ওই বছরের ১৪ অক্টোবর শেষ হয়। আর আগামী ১৪ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণের দুই বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির।

এদিকে, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন কমিটির দাবিতে গত বছরের জানুয়ারিতে সংগঠনের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী দলীয় কার্যালয়ে একত্রিত হয়ে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে দ্রুত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের জন্য বিএনপি মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে দাবি জানান। এর আগে নতুন কমিটির দাবিতে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মামুন খান ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় অনশন শুরু করলে বিএনপি মহাসচিবের আশ্বাসে তা ভঙ্গ করেন। এতোকিছুর পরও বিএনপির হাইকমান্ড আগ্রহ না দেখানোয় ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। তবে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা ও তোড়জোড় অব্যাহত থাকে। তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ঈদুল আজহার আগে সারাদেশে দ্রুতগতিতে ছাত্রদলের ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের তৎপরতায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে পুনরায় তোড়জোড় শুরু হয়। তবে কমিটির পর পদবঞ্চিতদের সম্ভাব্য বিদ্রোহের আশঙ্কাসহ নানা কারণে শিগগির ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে বিএনপির হাইকমান্ড তেমন আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় দুই বছর উত্তীর্ণ হতে যাওয়ায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি পদপ্রত্যাশী নেতাদের অনাস্থা চরমে পৌঁছেছে। ছাত্রদলের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বকে তারা এখন মানতে একেবারে নারাজ। এছাড়া নতুন কমিটির দাবিতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।  জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় বক্তৃতা করতে এলে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে নিজ সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। পরে অবশ্য বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর গত রোববার ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাথে সাক্ষাৎ করেন সংগঠনের পদপ্রত্যাশী ২০/২৫ জন নেতা। সেখানে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন কমিটির ব্যাপারে ফয়সালা করতে রিজভীর কাছে মৌখিকভাবে দাবি জানান তারা। ছাত্রদল নেতারা তখন বলেন, দুই বছর মেয়াদ হলেও চার বছর ধরে বর্তমান কমিটি চলছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য এলাকার রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দলের কেউ তাদের মানে না। এই কমিটি আমরা মানি না। অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিন, প্রয়োজনে সুপার ফাইভ কমিটি করে দিন। আর নতুন কমিটি করা সম্ভব না হলেও বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়া হোক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য রিজভীকে অনুরোধ জানান তারা। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে ৪ সেপ্টেম্বর তাদেরকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন রিজভী।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও দলের প্রথম ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দৈনিক করতোয়াকে বলেন, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বাস্তব কিছু অসুবিধাও রয়েছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষমতা হলো পার্টির চেয়ারপারসনের। কিন্তু মিথ্যা মামলায় তিনি এখন কারাগারে। এমন প্রেক্ষিতে গঠনতন্ত্র মোতাবেক এখন ক্ষমতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন লন্ডনে। সবকিছু বিবেচনা করে উপযুক্ত সময়ে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিগত কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী দৈনিক করতোয়াকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা রেজাল্ট বের হয়ে আসবে।

আরো সংবাদ