আজ - শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ৩:৪৩

নিভেও নেভেনি সুন্দরবনের আগুন! ঘুরেফিরে একই স্থানে জ্বলছে, কারণও এক

সুন্দরবনের পূর্বের অংশে প্রায় একই জায়গায় ঘুরেফিরে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আগুন লাগছে। কারণ হিসেবেও ঘুরেফিরে একই কথা বলা হচ্ছে—এপ্রিল-মে মাসে ভয়াবহ গরম থাকে, গাছপালাগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এলাকাটি মরুভূমির মতো, চোরা মাছ শিকারিদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন, মৌয়ালদের মাছি তাড়ানো ধোঁয়ার আগুনে বনে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর তদন্ত কমিটি হয়, প্রতিবেদনও বিভাগে জমা পড়ে। কিন্তু আগুন লাগার এই প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না।

সর্বশেষ গত সোমবার সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে আগুন লাগে। গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় আগুন সম্পূর্ণ নিভে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল বুধবার সকালে অগ্নিকাণ্ড এলাকার দক্ষিণ পাশে নতুন করে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। সকাল ৭টার দিকে বনসংলগ্ন দক্ষিণ রাজাপুর মাঝের চর গ্রামের বাসিন্দারা আগুন ও ধোঁয়া উড়তে দেখে বন বিভাগকে খবর দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বন বিভাগ, ফায়ার ব্রিগেডের তিনটি ইউনিট ও এলাকাবাসী সুন্দরবনে নতুন করে জ্বলে ওঠা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। দুদিন আগে যেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তার দক্ষিণ পাশে আরো প্রায় আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। মরা ভোলা নদীতে পাইপ লাগিয়ে সেখানে পানি ঢালা হয়। তবে আগের মতো আগুনের তীব্রতা নেই এবং তা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বন বিভাগ ও ফায়ার ব্রিগেড সূত্র জানিয়েছে।

বনসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নোনা জলাবেষ্টিত বনভূমি হলেও শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের একটি বিশাল এলাকা শুষ্ক মরুভূমির মতো। বনটির সীমানা ঘিরে থাকা ভোলা নদী প্রায় তিন দশক আগে শুকিয়ে যাওয়ায় বসতি ও বনভূমি একাকার। বড় নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় খরমা খাল ও সংলগ্ন অর্ধশতাধিক খাল-নালা শুকিয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষও হরহামেশা বনের মধ্যে যাতায়াত করে। ফলে সামান্য একটু এদিক-সেদিক হলেই এখানে আগুন লাগছে।

শরণখোলা রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের মধ্যকার প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর এলাকায় বছরে ৯ মাসেরও বেশি সময় পানির দেখা মেলে না। বৃষ্টি হলে এখানে পানি আসে। নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় এখানে বনের চরিত্র পাল্টে গেছে। যে কারণে লতা ও গুল্মজাতীয় গাছপালা শুকিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সামান্য বিড়ির আগুনও বড় হয়ে ওঠে।

বনসংলগ্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বসতি ও বনাঞ্চলের মধ্যে সীমারেখা না থাকায় মানুষ অনায়াসে বনের মধ্যে যাতায়াত করতে পারে। আবার মৌয়ালরা মধু আহরণের এই সময়টাতে বনে মৌমাছি তাড়ানোর জন্য ধোঁয়া ব্যবহার করে। তারা একটু অসাবধান হলেও আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গত ১৫ বছরে সুন্দরবনে ২৭ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ অগ্নিকাণ্ডের তিন মাস আগেও কাছাকাছি এলাকায় আগুন লেগেছিল। কিন্তু দুর্গম এলাকা ও পানি না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ে।

শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘গত দুদিন আমরা যে স্থানে আগুন নিভিয়েছি সেখানে কোনো আগুন বা ধোঁয়া দেখা যায়নি। এর পার্শ্ববর্তী নতুন এলাকায় এই আগুন দেখা দেয়। নতুন ও পুরনো এলাকা ঘিরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার বনভূমিতে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। ফায়ার লাইনের মধ্যেই আগুন সীমাবদ্ধ রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে অগ্নিকাণ্ড এলাকায় পানি ঢালার পর বিকেল সাড়ে ৪টায় স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে আবার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’

বাগেরহাট ফায়ার ব্রিগেডের সহকারী উপপরিচালক (ডিএডি) গোলাম সরোয়ার গতকাল বিকেল ৫টায় মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুদিনে আগুন নেভানোর কাজ সমাপ্ত করে আমরা চলে যাই। আজ (বুধবার) আবার নতুন করে আগুন লাগার খবর জানায় বন বিভাগ। প্রথমে শরণখোলার টিম কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আমরা এসে আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হই। বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

বন বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আগুন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। ফায়ার লাইনের মধ্যে থেমে থেমে সামান্য আগুন ও ধোঁয়া দেখা দেওয়ায় সেখানে পানি ঢেলে নেভানোর কাজ চলছে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।’

আরো সংবাদ