যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি আবু সালেহ মাসুদ করিমকে ছাত্রলীগ নেতার খুনি এবং বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নির্যাতনকারী অভিহিত করে তার প্রত্যাহার দাবি করেছে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেত্ববৃন্দ।
যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি আকুল হুসাইনের বাড়িতে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি নিয়ামত উল্লাহ। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি, জাবের হোসেন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবীর শিপলুসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচনের আগে গত ২২ ডিসেম্বর আকুল হোসেনের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এই হামলার পর থেকে নিরাপত্তার জন্য তিনি বেনাপোলের বাড়ি ছেড়ে যশোর শহরে বসবাস করেন। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি আবু সালেহ মাসুদ করিম বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে আকুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ আরো দাবি করেন. ওই বাড়িতে গত ছয় মাস কেউ বসবাস করেন না। আকুলকে ফাঁসাতে গভীর রাতে সাথে করে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গিয়ে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার দেখানো হয়েছে। এবং তার বিরুদ্ধে বদনাম রটাতে ফেসসিডিলের বোতল উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পোর্ট থানার ওসি আবু সালেহ মাসুদ করিমের হাতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার রক্ত লেগে আছে। এর আগে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় কর্মরত ছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ধানমন্ডির ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদকে খুন করার অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাকে ধানমন্ডি থানা থেকে বদলি করা হয়। শার্শা থানার দায়িত্ব নিয়েও তিনি একইভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছেন। তারই অংশ হিসেবে আকুলের বাড়ি থেকে রাতের অন্ধকারে অবৈধ জিনিস উদ্ধারের নাটক করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওসির পরিবারকে বিএনপি সমর্থক হিসেবেও দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ওসির প্রত্যাহার দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, আবু সালেহর কারনে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। তিনি বেনাপোলে থাকলে আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে।
উল্লেখ্য, যশোরের বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টুর ওপর গত বৃহস্পতিবার রাতে বোমা হামলা হয়। এ ঘটনার পর ওই রাতেই বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসেনের বেনাপোলের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে পুলিশ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ১২টি ম্যাগজিন, পিস্তলের ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, আটটি দেশীয় অস্ত্র, হাতুড়ি ও ৩৩ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে।
বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ করিম বলেন, ‘আমি কারও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বেনাপোল থানায় আসিনি। প্রকৃত অর্থে আকুল হুসাইন একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী। তাঁর দখলে থাকা ওই বাড়ি থেকে পিস্তলের ১২টি ম্যাগাজিন, তিনটি গুলি, ছয়টি রামদা ও ফেনসিডিলের ৩১টি খালি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। এটি কোনো নাটক না। গ্রামবাসীর সামনেই এই অভিযান চালানো হয়।’
ওসি মাসুদ করিম আরও বলেন, এ ঘটনায় বেনাপোল থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আকুলকে এজাহারভুক্ত আসামি না করলেও ঘটনার বিবরণে তাঁর নাম রয়েছে। অভিযানের সময় আকুল উপস্থিত ছিলেন না। এ জন্য মামলার এজাহার থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর অনুসারী দুই যুবককে আসামি করা হয়েছে। অভিযানের দিনে তাঁরা পালিয়ে যান। আকুল তখন ওই বাড়িতে অবস্থান না করলেও বাড়িটি তাঁর দখলেই রয়েছে। তাঁর ছেলেরা ওই বাড়িতে ওঠাবসা করেন। আকুল মাঝে মধ্যে সেখানে যাতায়াত করেন।
খানজাহান আলী 24/7 নিউজ// সৈকত মৃধা