আজ - শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - বিকাল ৪:৫৩

বিজয়ের ৫১ বছর পরও বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিস্তম্ভ অবহেলিত।

বিজয়ের ৫১ বছর পরও বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিস্তম্ভ অবহেলিত

মোঃ নয়ন হোসেন, সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থী সরকারী বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজ, শার্শা, যশোর।।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার আমানত শেখ। নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগ দেন। বর্তমানে যা ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) নামে প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন। পরে নূর মোহাম্মদ ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধচলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নূর মোহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

 

স্বাধীনতার কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ হয়নি। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ছাড়াও এখানে শহীদ আব্দুল আহাদ, শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান (প্রাক্তন ইপিআর), শহীদ সৈয়দ আতর আলী (তদানিন্তন গণ পরিষদ সদস্য), শহীদ বাহাদুর আলী, শহীদ সিপাহী আব্দুস ছাত্তার বীরবিক্রম (প্রাক্তন ইপিআর) ও শহীদ সিপাহী এনামুল হক বীরপ্রতীক (প্রাক্তন ইপিআর)। বিশেষ কোনো দিবস ছাড়া স্মৃতিস্তম্ভটি সারা বছরই অযত্ন-অবহেলায় থাকে। এখানে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। অতিথিদের বসার বা রেস্ট করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। যার ফলে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিদিন দেখতে আসা শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীদের অভিযোগের যেনো শেষ নাই ।

দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের দাবি , শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ বিশেষ কোনো দিবস ছাড়া সারা বছরই অযত্ন-অবহেলায় থাকে। বসার বা রেস্ট করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও শিশুসহ শিক্ষার্থীদের জন্য এখানেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক কিছু বিষয়ে তুলে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করে ক্ষুদ্র জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানান অনেকে। তাছাড়া বীরশ্রেষ্ঠের এই সমাধি স্থানটির মাঝখান দিয়েই চলে গেছেন পাকা পিচের সড়ক। সেই সড়কটি অনেকেই বিকল্প পাশে দিয়ে বা নির্মাণ করে সমাধি স্থানটির সৌন্দর্য বাড়াতেও দাবি জানান।

সমাধীস্থলে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী মিনানুর রহমান জানান, বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের নানা পটভূমি পড়েছে। ইতিহাসে বীরশ্রেষ্ঠের নাম শুনেছি। কিন্তু তাদের করব দেওয়ার স্থানটি (সমাধী) যে এভাবে থাকে কখনোই আশা করি নি। এখানে এসে ভেবেছিলাম হয়তো মুক্তি যুদ্ধের নানা বিষয়ে ধারণাটা বাড়বে কিন্তু এখানে সেই ধরনের কিছুই নাই। (সে জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানায়)।

স্মৃতিস্তম্ভটি সংরক্ষণের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য (ওয়ার্ডের মেম্বার) সিদ্দীক জামান লাল্টু বলেন, কয়েকটি দপ্তরেই সমাধিস্থানটি পূর্ণ সংরক্ষণ করতে জানানো হয়েছে। দ্রুত আধুনিকভাবে সমাধিস্থলটি নির্মাণ প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অইচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বলেন, “আগামীর প্রজন্ম বাংলাদেশের ৭১ এর ইতিহাস জানবে বা ঐতিহ্য ধরে রাখবে এই ধরনের পদক্ষেপ সরকার গ্রহন করলেও সেটার দৃশ্য বা নমুনা এখানে নাই। যে মানুষটি তার জীবনের বিনিময় এদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করলো তার (নূর মোহাম্মদ শেখ) সমাধীস্থল এতটা অবহেলিত থাকবে এটা কখনোই কাম্য নয়। ” দ্রুত সরকার বা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধীস্থল সম্পর্কে স্থানীয় ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর ইসলাম মল্লিক মুঠোফোনে জানান, “সমাধি স্থানটির পরিবেশ উন্নয়নের প্রয়োজন। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসলে বিশ্রাম নেওয়ার মতো বসার জায়গাটাও এখানে নাই। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দ্রুত এই স্মৃতিস্তম্ভসহ জায়গা সরকারের সংরক্ষণের প্রয়োজন বলে মনে করছি। ”

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, কাশিপুর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ এর মাজারে শৌচাগারের নির্মাণের ব্যাপারে উপজেলার পক্ষ থেকে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে শৌচাগার নির্মানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া সমাধিস্থলটি রক্ষণাবেক্ষণ করার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবির) সাথে কথা বলে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরো সংবাদ