আজ - বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ৭:৩৫

বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য-১০০ আসন পযর্ন্ত ছাড় দিতে প্রস্তুত বিএনপি

সরোয়ার আলম:  ছোট দলগুলোর বড় আবদারে বিএনপির ছাড় দেয়ার ইঙ্গিতের পরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অনিশ্চয়তা কাটছে না। এ ক্ষেত্রে জামায়াত বড় বাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে

ছোট দলগুলোর বড় আবদারে বিএনপির ছাড় দেয়ার ইঙ্গিতের পরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অনিশ্চয়তা কাটছে না। এ ক্ষেত্রে জামায়াত বড় বাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে। গণফোরাম ও যুক্তফ্রন্টের জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ঐক্যে না যাওয়ার ঘোষণায় এই শঙ্কা আরও বেড়েছে। তবে বিএনপি এখনই হাল ছাড়বে না। জামায়াতে ইসলামীকে রেখে কৌশলে ঐক্য গড়তে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, সবোর্চ্চ ছাড় দিয়ে হলেও বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে আওয়ামী লীগকে হটাতে চায় বিএনপি। প্রয়োজনে ১০০ আসন পযর্ন্ত ছাড় দিয়ে হলেও ঐক্য গড়তে প্রস্তুত বিএনপি। এর পেছনে তাদের গ্রহণযোগ্য যুক্তি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে এক. ঐক্য না গড়তে পারলে আবারও যেনতেন নিবার্চন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। দুই. তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। তিন. ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশি ছাড় না দিলে এই সুযোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেবে। তাই বিএনপির স্বাথের্ই সবোর্চ্চ ছাড় দিয়ে বৃহত্তর ঐক্যে থাকতে হবে।

গণফোরাম ও যুক্তফ্রন্ট জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ঐক্য নয় বলার পরও এ নিয়ে এখনই বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন। তবে নীতিনিধার্রণী ফোরামের এক নেতা জানান, ড. কামাল হোসেন জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ঐক্য করতে চান না যেমন বলেছেন, তেমনি জামায়াতে ইসলামী কোনো নিবন্ধিত দল নয়, সেটাও বলেছেন। এর মানে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েই বতর্মান অবস্থায় যুগপৎ আন্দোলনে থাকার ইঙ্গিত। এ জন্য ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আশা ছাড়ার এখনো কোনো কারণ নেই।

বিএনপি সূত্রমতে, দেশের স্বাথের্ সবোর্চ্চ ছাড় দিয়ে হলেও বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চায় তারা। শেষ পযর্ন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিবার্চনে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হলে প্রয়োজনে ১০০টি আসন পযর্ন্ত ছাড় দেয়ার মানসিকতাও রয়েছে। ঐক্য গড়তে রাজনীতির গুণগত পরিবতর্ন আনা, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি কী করবে, সে বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট অঙ্গীকার করারও প্রস্তুতি আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশতর্ মুক্তি, সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকমীর্র মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নিবার্চনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নিবার্চন কমিশন পুনগর্ঠন, নিবার্চনে দেশীয় ও আন্তজাির্তক পযের্বক্ষক নিয়োগ, বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ, নিবার্চনে ইভিএম ব্যবহার না করা, রাষ্ট্রের সবর্স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা এবং নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করাসহ প্রায় দেড় ডজন প্রস্তাবনার একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। ঐক্য নিশ্চিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবগুলো দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেও প্রস্তাব নেয়া হবে। ছোট দল হলেও গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব দিলে সেটা মেনে নিয়ে ঐক্য গড়তে সবোর্চ্চ আন্তরিকতা দেখাবে বিএনপি। ঐক্য গঠন হলে নেতৃত্ব নিয়েও বিএনপির ছাড় দেয়ার মানসিকতা রয়েছে। সবার গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নেতা নিবাির্চত করতেও আপত্তি করবে না তারা। জামায়াতে ইসলামীকে রাখতে আপত্তি জানালে নিবন্ধনসহ আরও যেসব বিষয় রয়েছে, সেসব বিষয়কে সামনে এনে কৌশলে এই দলটিকে রাখার চেষ্টা করা হবে। সব মিলে চলতি মাসের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গঠনে সবোর্্চ্চ চেষ্টা করে যাবে বিএনপি। শেষ পযর্ন্ত যদি ঐক্য না হয়, তাহলে অক্টোবরের শুরুতে একাই আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি দেখাবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ঐক্য প্রক্রিয়া সফল করতে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিদের্শ দিয়েছেন। এরপরও যদি নিদির্ষ্ট সময় বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে এর কারণ অনুসন্ধান করা হবে। কারা কাদের স্বাথের্ এই প্রক্রিয়া নস্যাৎ করেছে, সেটা জাতিকে অবহিত করা হবে।

বিএনপির নীতিনিধাির্রণী ফোরামের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতে চায়, ২০-দলীয় শরিকদের সঙ্গে নয়। অথচ বিএনপি যে দাবি জানাচ্ছে, একই দাবি বাকি ১৯ দলেরও। এরপরও কেন তাদের আপত্তি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি সবোর্চ্চ ছাড় দেয়ার পরও ঐক্য গড়তে যদি অন্য দলগুলো আগ্রহ না দেখায়, তাহলে একলাচল নীতিতে যাবে বিএনপি।

বৃহত্তর ঐক্যের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে যুক্তফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে নয় শুধু বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতে চান তারা। এ বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়েই তারা ঐক্যের পথে হঁাটবেন। তিনি বলেন, এখন সবাইকে সবার প্রয়োজন বলেই জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে আসছে। এখানে সব দলের প্রস্তাবকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি অভিন্ন লক্ষ্যে পেঁৗছানো সম্ভব হবে।

আর বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কোনো বড় উদ্যোগ সফল হতে নানা প্রতিবন্ধকতা সামনে আসতে পারে। সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই জাতির বৃহত্তর স্বাথের্ ঐক্য হবে।

আরো সংবাদ