বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্র-গুলি ও প্রাইভেটকারসহ আন্তঃদেশীয় ৫ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো আকুল হোসেন, ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন ও ফজলুর রহমান। এসময় তাদের হেফাজত হতে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি, ১৬ টি ম্যাগাজিন ও ১টি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বুধবার) ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর মিরপুর, দারুসসালাম ও গাবতলী এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান জোনাল টিম ।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২১) দুপুর বারোটায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, সম্প্রতি গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ কর্তৃক বিভিন্ন অপরাধীদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। এ উদ্ধার সংক্রান্তে রুজুকৃত মামলাগুলির তদন্তকালে জানা যায়, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোর জেলার বেনাপোল হতে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তা সারা দেশে অপরাধীদের নিকট সরবরাহ করছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী যশোর জেলার বেনাপোল এলাকার কে বা কারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত তা জানার লক্ষ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগৃহীত হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক অস্ত্র কেনা-বেচা দলের সদস্যরা বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি নিয়ে অপরাধীদের নিকট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রাইভেটকার যোগে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢাকায় ঢুকবে মর্মে জানা যায়। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ০১/০৯/২০২১ খ্রিঃ রাতে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম দারুস সালাম থানা এলাকার দিয়াবাড়ীগামী রাস্তা, বেড়ীবাধগামী রাস্তা ও কল্যাণপুরগামী রাস্তায় অবস্থান করে। রাত ০৩:১৫ টায় একটি সিলভার রংয়ের প্রাইভেটকার গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে সন্দেহজনকভাবে দ্রুত গতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকলে দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থানরত টিমকে বেতার মারফত রাস্তায় বেরিকেড দিতে বলা হয় এবং অন্য টিমগুলো প্রাইভেটকারটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে। ডিবি’র সদস্যরা স্থানীয় জনগণের সহায়তায় রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি দিয়ে দারুস সালাম থানার বেঁড়ীবাধ বড় বাজার এলাকায় রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করে। জ্যামে আটকা পড়া গাড়িটিকে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা অভিযুক্তদেরসহ আটক করে। সাক্ষীর উপস্থিতিতে গ্রেফতারকৃতদের যথাযথ তল্লাশী করে উপরোক্ত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, এই অস্ত্র ব্যাবসা চক্রের মূলহোতা আকুল নিজে বা তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র সরবরাহ করতো। সে ২০১৪ সাল থেকে অদ্যাবধি দুই শতাধিক অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃতরা অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা ও মাদক আইস এর ব্যবসা করে আসছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতে তৈরি এসব অবৈধ অস্ত্র ২৮/৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্টির নিকট ৮০/৯০ হাজার টাকায় বিক্রয় করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।
বাংলাদেশ পুলিশ তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এধরণের অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা প্রতিরোধে সদা সজাগ রয়েছে বলে জানান পুলিশের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
যশোর জেলা আওয়ামীলীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, আকুল হোসাইনের সেল্টার দাতাদের প্রধান সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা। সাবেক ঐ ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে আকুলের স্বর্ন চোরাচালানের ব্যবসা রয়েছে। দুজনের সকল অপকর্মের বিষয়ে যশোরের গোয়ান্দা সংস্থ্যা অবগত থাকলেও অদৃশ্য শক্তির ভিত্তিতে এতোদিনেও গ্রেফতার হয়নি তারা।
গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমানের নির্দেশনায় অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান সরদারের তত্ত্বাবধানে এডিসি মাহবুবুল হক সজীবের নেতৃত্বে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়।