আজ - শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৫৮

ভাগ-বাটোয়ারায় বনিবনা না হওয়ায় বহিষ্কৃত তৈমুর!

টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তারেক রহমানের মৌখিক অনুমতি নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন।

তারেক রহমানকে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন নির্বাচনে নাটকীয় ফলাফল হবে বলে। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের একটি অংশও তাকে সমর্থন করবেন।

এর পরই তারেক রহমান তাকে সবুজ সংকেত দেন। সংকেত পেয়ে পুরো বিএনপিকে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তৈমুর। তাকে একজন ব্যবসায়ী অর্থায়ন করেছেন, এমন গুঞ্জন বিএনপির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ডা. আইভীর বিরুদ্ধে যেন ভালো ফলাফল করতে পারেন, সেজন্য ওই ব্যবসায়ী সহযোগিতা করেন।

তবে ঠিক কত টাকা তৈমুর আলমকে নির্বাচনী কাজে দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। অনেকেই বলছেন, তৈমুর আলম নির্বাচন বাবদ ঐ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা পেয়েছেন। আর সেই খবরটি তারেকের কাছে পৌঁছে গেছে।

বার্তা পেয়ে তারেক রহমান বিভিন্ন মাধ্যমে তৈমুর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এর সত্যতা জানতে চান। যদিও তৈমুর আলম আর্থিক লেনদেনের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তৈমুরের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য মনে না হওয়ায় তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও বিএনপির নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন তৈমুর আলমের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেন এবং তাকে জয়ী করতে সব ধরনের তৎপরতা চালান।

তৈমুর আলম খন্দকার শুধু ওই ব্যবসায়ী নয়, বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিপুল অর্থ তুলেছেন বলে বিএনপির কোনো কোনো নেতা অভিযোগ করছেন। আর সেসব খবর যথারীতি পৌঁছে গেছে লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমানের কানে।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, হারবেন জেনেও মূলত অর্থ প্রাপ্তির জন্য তৈমুর আলম নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত যখন নির্বাচনে তিনি প্রায় ৬৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তখন বিএনপির অনেকে মনে করছেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার যে টাকা খরচ করার কথা ছিল, সেই টাকা তিনি খরচ না করে নির্বাচনকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবেই তিনি নিয়েছিলেন। টিভি প্রতিবেদনে দেখা গেছে অনেক কেন্দ্রে তিনি এজেন্ট পর্যন্ত দেননি।

নির্বাচনের পর বিজয়ী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তৈমুরের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যান। তৈমুর আলম এ সময় আইভীকে দোয়া করেন। এতে বিএনপির হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে।

কারণ, বিএনপি যখন বলছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি, বলছে ইভিএম কারচুপির মেশিন, এই সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না, ঠিক সেসময় তৈমুর পরাজয় মেনে, বিজয়ী প্রার্থীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে সরকারকে উল্টো সার্টিফিকেট দিয়েছে বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন। তৈমুর এই নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে পরাজয় মেনে নিয়েছেন।

বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন, শেষ পর্যন্ত তৈমুর আলম যদি এই নির্বাচনে না আসতেন তাহলে এই নির্বাচন অর্থহীন এবং আকর্ষণহীন হতো। কিন্তু এই নির্বাচন উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ার কারণে সরকার এই নির্বাচনকে দেখিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব- এরকম একটি বার্তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দিতে পারবে।

আর এ কারণেই বিভিন্ন মহল মনে করছে, বিএনপির নেতারা তৈমুর আলমের সন্দেহজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলেই তারেক রহমান তাকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে একাধিক সূত্রের দাবি, বহিষ্কারের মূল কারণ টাকার ভাগ-বাটোয়ারা। তারেক রহমান ভেবেছিলেন, নির্বাচনে দাঁড়ালে দলীয় প্রথা অনুযায়ী, নেতা-কর্মীদের পাশে পাওয়া নিশ্চিত করতে তৈমুর আলম তাকে ভেট দিবেন। কিন্তু তৈমুর এই খাতে তারেক রহমানকে একটি ফুটো পয়সাও দেননি।

এর আগের বিভিন্ন নির্বাচনে যারাই অংশগ্রহণ নিয়েছেন, তারাই তারেক রহমানকে ভেট দিয়েছেন। তারেককে ভেট না দিয়ে ভোটে দাঁড়ালে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে পাওয়া সম্ভব নয়।

তৈমুর আলম হয়ত ভেবেছিলেন, বিপুল জনপ্রিয় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপরীতে কোনোভাবেই জয় সম্ভব নয়। তাই তারেক রহমানকে অযথা টাকা-পয়সার ভাগ দেওয়ার যুক্তি নেই। ফলে তৈমুর আলম দলের পদ-পদবি খোয়ানোর ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত