যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০কেজি চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারে (৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর) ওয়ার্ডের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওয়াতায় গরিবও দরিদ্রদের জন্য ১৫ টাকা দরে ৪৯৯ জনের১৪ হাজার ৯৭০ কেজি চাল বিতরণের কথা ছিল।
বিতরণের দিন সকালে বিএনপি’র দু গ্রুপের একটি পক্ষ মাস্টার মতিয়ার গ্রুপের নেতা ঢাকুরিয়ার খালপাড়ের মোস্তফা রহমান মনার ছেলে তরিকুল ইসলাম ও তেলিকুড়ের খলিলের ছেলে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকশত বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে বাজারে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং দরিদ্রদের জন্য ৪৯৯ জনের চাল দিতে বাধা প্রদান করেন।
এসময় মাস্টার মতিয়ার পক্ষের তরিকুল ইসলাম ও মিজানুরের নেতৃত্বে থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের নেতা কর্মীর উপর হামলা চালালে এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার এক পর্যায় সংর্ঘষে রুপ নেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম মেহেদী মাসুদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আপরদিকে, মণিরামপুর থানার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত এই চাল বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ প্রদান করেন।ফলে গরিব ও দরিদ্রদের জন্য ৪৯৯ জনের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এসব দরিদ্র পরিবারের এখন চালের সংকট চলছে। কারণ শ্রমজীবী দরিদ্র এ পরিবারে টানাপোড়েন চলছে। কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে, দরিদ্র,অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে কৃষক শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করে কম দামে চাল বিক্রির এ কার্যক্রম চালু করে সরকার।
ঢাকুরিয়া খালপাড় এলাকার মোসলেম উদ্দিন, ভবানীপুর গ্রামের মোহাম্মদ আহাদ,ঢাকুরিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার মাজদা বেগম,কলেজপাড়া এলাকার ফরিদা খাতুনসহ একাধিক কার্ডধারী জানায়, ‘আমরা গরিব মানুষ,দিনমজুরি করে খায়।চাল না পেয়ে আমরা অনেকেই অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। আমরা খুব সমস্যায় আছি। বাজারের সকল পণ্যের যে উর্ধ্বমুখী দাম তাতে বাজার করে চাল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেয়। সকলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।’
ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইসরাফিল আমার গ্রুপের।গত বৃহস্পতিবার সকালে চাল বিতরণের প্রস্তুতি নিলে দলের অন্য গ্রুপের লোকজন ঢাকুরিয়া বাজারে চাল বিতরণের বিপক্ষে মিছিল বের করে। পরে চাল নিতে আসা লোকজনসহ আমার গ্রুপের লোকজন ওদের বিপক্ষে মিছিল করতে গেলে ওই পক্ষ মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হয়েছে।
ডিলার জাহিদুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের কারণে ও প্রশাসনের নির্দেশে চাল বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে।
৬ নাম্বার ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন জানায়,দলমত নির্বিশেষে কার্ড ধারীদের চাল প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তবে বিএনপির অপর একটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে এটা বন্ধ করে দেয়।
সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বর সাথী বেগম বলেন,খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মঙ্গলবার ১ অক্টোবর চাল তুলে ঢাকুরিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল হোসেনের দোকানে মজুদ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার চাল বিক্রি লাভের টাকা ভাগ চাওয়া নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনী ও ঘঠনাস্থলে আসেন।
মনিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন,পরিবেশক নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাদের সঙ্গে কথা বলে সেপ্টেম্বর মাসের চাল তুলে ঢাকুরিয়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকের ঘরে তোলেন। বিএনপির দুই গ্রুপের মারামারি হওয়াতে চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান আপাতত আমরা এ কর্মসূচি বন্ধ রেখেছি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটা বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া কবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা এখনো এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনআছে।