বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যশোরের মনিরামপুর। গত দুই দিনে পৌর শহরে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি করা হয়েছে।
এতে দুইপক্ষের ৫ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল ও সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছার অনুসারীরা। এসব ঘটনায় দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন।
জানা গেছে, দল ক্ষমতায় না থাকলেও কয়েক বছর ধরে উপজেলা বিএনপির মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল ও অন্যপক্ষের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা। তবে ৫ আগস্ট রাজনীতিক পট পরিবর্তন হওয়ার পরে এই গ্রুপিং দ্বন্দ্ব আরোও প্রকট আকার ধারণ করেছে। নেতাকর্মীদের ভাষ্য- নেতাকর্মীদের প্রতিশোধ পরায়ন, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আদিপত্য বিস্তার নিয়েই মূলত এই গ্রুপিংয়ের দ্বন্দ্ব।
এ বিরোধ পৌঁছেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত। সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। একটি ওয়াজ মাহফিলে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর লুটপাট ও আসবাবপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান ভাঙচুর ও সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে মুছা পক্ষের অনুসারীরা উপজেলা বাজারে শোডাউন ও অবস্থান নেয়। তার পেক্ষিতে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার পর বাজারে অবস্থান ও শোডাউন দেয় ইকবাল গ্রুপ। এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ইকবাল গ্রুপ। পরে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ইকবাল পক্ষ ও মুছাপক্ষের নেতাকর্মীরা পৌরশহরে মিছিল বের করলে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠে। আতঙ্কে সাধারণ লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে। দোকানপাটও বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইকবাল গ্রুপ। তারা এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আগে যারা ছাত্রলীগ করতো এখন তারা বিএনপি নেতা ইকবালের ছেলের সঙ্গে রাজনীতি করছে। তারা গত বুধবার রাতে একটি মাহফিলে কয়েকজনের সাথে হাতাহাতি করেছে। ইকবাল গ্রুপিংয়ের ছেলেরা যাদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে; তারা আবার আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করে। সেই জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মিছিল বের করেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল বলেন, সহিংসতার ঘটনায় আমার লোকজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উপজেলা বাজারে গত দুই দিন ধরে যা হয়েছে সব মুছার লোকজন করেছে। দলীয় কার্যালয় হামলা করতে এলে আমরা ছেলেরা প্রতিহত করেছে। বিষয়টি জেলা বিএনপির নেতাদের জানিয়েছি।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মনিরামপুরে যত অপকর্ম ঘটছে; সেটা বিএনপি নেতা ইকবালের লোকজন করেছে। গত কয়েকজন ধরে উপজেলা বাজারে যা ঘটছে; সেটাও ইকবালের সরাসরি ইন্ধনে হচ্ছে। সরেজমিনে তদন্ত করলে আপনারা সত্যতা পাবেন।
এ বিষয়ে মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি পলাশ কুমার বিশ্বাস জানান, কোনোপক্ষই এখনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ঘটনায় শহর উত্তপ্ত রয়েছে।