‘আমার সামী মারা যাওয়ার পর আমি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কোনো লাভ হয়নি। সকলেই বলে সব কাগজপত্র জলের মত পরিষ্কার। কিন্তু শেষ অবধি কোনো কাজ হয়নি। এটা আমার সামীর জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা। বুধবার সকালে মহেশপুর প্রেসক্লাবে এসে উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বজরাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বিসের স্ত্রী রিনা বেগম কান্নজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন।
জানা যায়, ভারতের মাজদিয়া ইয়থ রিসিপশন ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শেষে আলতাফ হোসেন বিসে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৮নং সেক্টরের যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমানের অধীনে যুদ্ধ অংশ নেন। যুদ্ধ চলাকালীন জীবননগর-উথলিসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
আলতাফ হোসেন বিসে যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ সাধীন করলেও, আজ জীবনযুদ্ধে তিনি পরাজিত সৈনিক। দেশ সাধীনের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা মুক্তিযোদ্ধার সীকৃতি মেলেনি।
পরিবারের সজনদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে লড়াই করেছেন দেশকে সাধীন করতে। ঠিক তেমনইভাবে জীবনের শেষ অবধি লড়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সীকৃতির জন্য। তবুও মেলেনি সেই সীকৃতি। সজনরা বলছেন, এখনও আশায় বুক বাঁধেন আলতাফ হোসেন বিসের ছেলে-মেয়েরা। আলতাফ হোসেন বিসের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কিছু দলিলপত্র প্রদান করেছেন তার স্ত্রী রিনা বেগম।
এরমধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, মৃত্যুর সনদ, মুক্তিযোদ্ধার সনদ, যুদ্ধ বৃত্তান্ত, যুদ্ধ শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের পরিচয়পত্র, যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান,বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান ছাব্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশারত বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বাবলু সা¶রিত প্রত্যয়ন পত্র, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর আপিল দায়ের ফরম।
কোটচাঁদপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বাবলু মহেশপুর প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে বলেন, আলতাফ হোসেন বিসে ভারতের মাজদিয়া ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষন শেষে কল্যানী ক্যাম্প থেকে অস্ত্র নিয়ে দেশে ফিরে জীবননগর উপজেলার ধোপাখালী ও উথলী যুদ্ধে আমার সাথে অংশ নেন। আমার জানা মতে আলতাফ হোসেন বিসে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
বর্তমানে এই অসীকৃত বীর যোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার স্ত্রী রিনা বেগম শেষ বয়সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি করেছেন তার সামীর মুক্তিযোদ্ধার সীকৃতি পেতে।