আজ - শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ৬:৩৮

মিয়ানমার হবে আরেক আফগান-যুক্তরাষ্ট্রের হুশিয়ারি!

স্পুটনিক তুর্কিকে “হাসান বিতমেজ এর হুশিয়ারি”

খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক:  মিয়ানমারের নেত্বত্ব বা রাজনৈতিক নেতারা যদি অল্প সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট দূর করতে না পারে তবে দেশটির জন্য চরম পরিণতিই অপেক্ষা করছে। তুরস্কের সাদত পার্টির সহ-সভাপতি হাসান বিতমেজ দেশটির জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘স্পুটনিক তুর্কি’র কাছে শুক্রবার এ সতর্কবাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান নেতৃত্ব যদি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করতে পারে, নেপিদো (মিয়ানমারের রাজধানী) যদি খুব দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়- সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই এ নিয়ে মাথা ঘামাবে। তেমনটি হলে মিয়ানমারের জন্য ইরাক ও আফগানিস্তানের ভাগ্যই অপেক্ষা করছে। যেমনটি ২০০০ সালের দিকে ঘটেছে।

 

হাসান বিতমেজ বলেন, মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই নাক গলিয়েছে- সেখানকার পরিস্থিতি হয়েছে ভয়াবহ। সেখানে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে, আক্রমণের পর আক্রমণে বিভিন্ন এলাকা ধুুলায় মিশে গেছে, দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবন। প্রাকৃতিক সম্পদে (তেল, গ্যাস ইত্যাদি) থাবা পড়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান বা অন্য কেনো দেশ- যেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া পড়েছে সেখানকার চিত্র একই। কাজেই পশ্চিমারা এখানে (মিয়ানমার) ঢুকলে বা তাদের কৌশল প্রয়োগের সুযোগ পেলে শুধু ক্ষতিই রয়েছে।

 

বিতমেজ আরও বলেন, বহিঃশক্তি (যেমন যুক্তরাষ্ট্র) শুধু তাদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণেই ব্যস্ত থাকবে। মিয়ানমার বা এখানকার মানুষের স্বার্থ দেখবে না। কাজেই মিয়ানমারকে চরম মূল্য দিতে হবে। সে সুযোগ না দিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

এ বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য প্রাকৃতিক জ্বালানিতে ভরা । এটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক করিডোরেও পড়ে। আর এজন্যই এটি নিয়ে চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ। ২০০৪ সালে যখন রাখাইনে জ্বালানির বিশাল মজুদের বিষয়টি উন্মোচিত হয়, তখনই সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে চীন। রাখাইনের অফসোর ফিল্ড থেকে রাজধানী বেইজিং পর্যন্ত বসিয়েছে গ্যাসের পাইপলাইন। একইভাবে রাখাইনের গভীর সমুদ্রবন্দর কেকফু থেকে চীনের কুনমিং পর্যন্ত তেলের পাইপলাইনও বসিয়েছে দেশটি। এর মাধ্যমে চীন মধ্য-পূর্ব ও আফ্রিকান অঞ্চলে তেল সরবরাহে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। আর বেইজিংয়ের ‘নিউ সিল্ক রোড প্রকল্পের’ গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেকফু। এ ছাড়া কেকফুকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে বেইজিং-নেপিদো চুক্তিই হয়েছে।

 

বিতমেজ বলেন, এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বাইরের ভূ-রাজনৈতিক খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র মনেপ্রাণেই চাইবে এর মধ্যে ঢুকে যেতে। এ অঞ্চলে জ্বালানিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় চীন-বাধা সরিয়ে দিতে। তিনি বলেন, সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাগ্য নিয়ে ভাবার সময় এসব বাইরের খেলোয়াড়দের নেই, কেবল রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুটিকে ব্যবহার করতেই তাদের যত আগ্রহ।

 

এ সংকট দূর করতে মুসলিম দেশগুলোকে এক হয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হাসান বিতমেজ। তিনি বলেন, প্রয়োজনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে হবে। তার মতে, যদি মিয়ানমার সরকার সংলাপ ও কূটনৈতিক তৎপরতার গুরুত্ব না-ই বোঝে তাহলে বিকল্প পথ তো বের করতেই হবে। বিতমেজ আশা করেন, তুরস্ক এ নিয়ে যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে এর মাধ্যমেই এ সংকট সমাধানের পথ খুলবে।

 

আরো সংবাদ