নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে ভোট কেন্দ্রগুলো ছিলো সুরক্ষিত। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি’র কড়াকড়ির মধ্যে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ স্ট্রাইকিং ফোর্সেরও টহল ছিলো নির্বাচনী এলাকায়। ফলে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকায় যশোরের দুই উপজেলার ইউপি নির্বাচন হয়েছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। বুধবার সদর ও কেশবপুরের ২৬টি ইউনিয়নের ‘ইউপি নির্বাচন’র ভোট গ্রহণ হয়।
ভোট গ্রহণের আগ পর্যন্ত ভয় ও আতঙ্ক থাকলেও নির্বাচন শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়। এমনও অনেক কেন্দ্র ছিলো যেখানে দিনের শুরুতেই ছিলো ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। বিশেষ করে প্রচুর সংখ্যক নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মত। অনেক কেন্দ্রে বয়স্ক ভোটারদের অন্যের কোলে চেপে ভোট দিতে আসার দৃশ্যও চোখে পড়ে। তবে বেশ কিছু ভোট কেন্দ্রের দৃশ্যচিত্র ছিলো একেবারে উল্টো। দিনের একটি পর্যায়ে গিয়ে কোন কোন কেন্দ্র হয়ে পড়ে একদমই ভোটার শুন্য।
বিচ্ছিন্ন বেশ কিছু সংঘাত-সংঘর্ষে এসব ভোট কেন্দ্র জনশুন্য হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতদের সেখানে অলস সময় পার করতে দেখা যায়। গতকাল দুপুরের দিকে সদরের দেয়াড়া মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি ছিলো পুরোপুরি ভোটার শুন্য। সেখানে ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ফলে দুপুরের পর কেন্দ্রটি একদম ফাঁকা হয়ে যায়।
নরেন্দ্রপুরে হাটবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে দলে দলে হাজির হন ভোটাররা। কিন্তু পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে ভোটাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এর পর সেখানকার ভোট ১ ঘন্টা স্থগিত থাকে। আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজু আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, উৎসবমুখর পরিবেশ হাটবিলা স্কুলে ভোট গ্রহণ চলছিলো। কিন্তু দুপুরের দিকে লাঠিপেটা করে ভোটারদের কেন্দ্র এলাকা ছাড়া করে পুলিশ। কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মুনির সংবাদিকদের জানান, মহিলা ভোটারদের লাইন থেকে জাল ভোট দেয়ার পায়তারা চলছিলো। সেজন্য লাঠিচার্জ করা হয়।
যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা চেষ্টার কারণে ভোটগ্রহণ ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে বিশৃঙ্খলা দমনে অ্যাকশনের সময় পুলিশেরও উপরও হামলা হয়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ইটের আঘাতে ফারুক নামে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। এদিকে, চুড়ামনকাটির ঝাউদিয়ার একটি ভোট কেন্দ্রে সকালের দিকে বিশৃঙ্খলা চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক অ্যাকশন নেয় পুলিশ।
সদরের ইউনিয়নগুলোর মধ্যে একমাত্র নওয়াপাড়ায় এদিন ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়। সকাল থেকেই সেখানকার ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি ছিলো অনেক। নারী-পুরুষ ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। তবে নিষিদ্ধ থাকলেও এই নির্বাচনী এলাকাটিতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের অনেকে মোটরসাইকেলের মহড়া দেয়।