আজ - শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ১:০৭

যশোরে ইউপি নির্বাচন : ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ‘পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ২৪

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নে নৌকা ও মোটরসাইকেল প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকেলে ইউনিয়নের সাতমাইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে উভয়পক্ষের ২৪ জন আহত হয়েছে। এলাকাবাসির মতে পুলিশের সরব উপস্থিতি ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় ভোটারদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। বড় ধরনের সহিংসতার হাত থেকে হৈবতপুর ইউনিয়নবাসীকে রক্ষা করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থক ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের হরেন কুমার বিশ্বাস নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসারের নিকটসহ বিভিন্ন দফতরে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে হৈবতপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হরেন কুমার বিশ্বাসের মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রচারণাকালে প্রচার মাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নৌকার সমর্থকরা প্রকাশ্যে তার মাইক ভাঙচুরসহ কয়েকটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এরপর ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং হরেন কুমার বিশ্বাসের সমর্থনে বুধবার বিকেলে সাতমাইল বাজারে পথসভার আয়োজন করে। একইসাথে নৌকা প্রতীকের আবু সিদ্দিকের কর্মী সমর্থকরাও পাল্টা সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে উভয়পক্ষে উত্তেজনা তৈরি হয়।

একপর্যায়ে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সকাল থেকেই সেখানে সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত হয়। বিকেল ৪ টার পরে একে একে সাতমাইল বাজারে উভয় পক্ষের কর্মীরা জড় হতে শুরু করলে পুলিশ সকলকে শান্তভাবে সভা করতে অনুরোধ করে। কিন্তু বিকেল ৫টার দিকে নৌকা প্রতীকের বেশকিছু নেতাকর্মীসহ প্রার্থী আবু সিদ্দিক ও ৩ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী হরেন কুমার বিশ্বাস একই বাজারে হাজির হন।

এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা শুরু হয়। উভয়পক্ষের লোক এসময় বাঁশের লাঠি হাতে মারমূখি হয়ে পড়ে। যা পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের নেতৃবৃন্দ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধির জন্য উর্দ্ধতন মহলকে অনুরোধ জানান। এরপর সেখানে বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য হাজির হয়ে উভয় পক্ষের লোকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর পুলিশের আশ^াস পেয়ে সন্ধ্যায় হরেন কুমার বিশ্বাস তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে পুনরায় ভোট চাইতে কেসমত বাজারে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া নৌকার কর্মী মোস্তফা, মিজানুর, লাভলু ও ইমরানসহ বেশকিছু লোক তাদের উপর হামলা চালায়।

এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী আবু সিদ্দিক জানান, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হরেন কুমার বিশ্বাসের কোন কর্মী নেই। তিনি কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তার পিছনে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি ভোট পাবেন না জেনেই আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা অবৈধ অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার কর্মীদের আক্রমন করতেই পরিকল্পিতভাবে বাজারে জড়ো হয়। বিষয়টি টের পেয়ে সেখানে পুলিশ হাজির হয়। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আমার কোন লোকও তার লোকদের মারপিট করতে যায়নি। উভয় পক্ষের যে কয়জন আহত হয়েছে তারা ডিবি পুলিশের লাঠি পেটায় আহত হয়েছে।

এদিকে মোটরসাকেল প্রতীকের প্রার্থী হরেন কুমার বিশ্বাসের অভিযোগ, মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে পিকআপ গাড়িতে মাইক বেধে নির্বাচনী প্রচারে বের হন তার কর্মীরা। এসময় নৌকা মার্কার কর্মী আমজেল, মিন্টু জহির, রহিম, সহিদ, মোশারফ, আলমগীর, সরোয়ার, তাহেরসহ নাম না জানা আরো অনেকে তাদেরকে প্রচার করতে বাধা দেয় এবং মাইক ভাংচুর করে নিয়ে চলে যায়। এসময় পাশে থেকে ঘটনার ভিডিও করায় কয়েকটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

বিষয়টি প্রার্থী তিনি জানার পর পুলিশকে অবহিত করলে কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও অজ্ঞাত কারণে কোন পদক্ষেপ না নিয়েই ফিরে আসে। এবিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট রিটানিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত কারণে কোন সুফল পাচ্ছেন না।

এরই প্রতিবাদ স্বরুপ বুধবার বিকেলে তার কর্মী সমর্থকরা সাতমাইল বাজারে পথসভা করতে যায়। একই সময় নৌকার প্রার্থীর পক্ষেও একই স্থানে পথসভা আয়েজন করায় পুলিশ উভয় পক্ষের সভা বন্ধ করতে অনুরোধ করে। কিন্তু উত্তেজিত কর্মী সমর্থকরা সেই নিষেধ মানতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে সভা বানচাল করে দেয়। এতে মোটরসাকেলের ৮ জন আহত হয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের ডিআইও-১ এম,মসিউর রহমান বলেন, আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করেছে। পুলিশের ভূমিকায় যদি কোনরকম ত্রুটি করা হতো তাহলে নিশ্চিত সেখানে খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটে যেতো। এলাকায় এখনও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে সার্বক্ষণিক আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা আছে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত