স্টাফ রিপোর্টার।। যশোরে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে একের পর এক ছিনতাই করে চলা চক্রের পালের গোদা রিপন গাজী সেই আলোচিত আরটিআর মোটর সাইকেলসহ আটক হয়েছে। সে যশোরের খোলাডাঙ্গা ধর্মতলার কদম তলার হানিফ গাজীর ছেলে।
১০ জুন বিকেলে ছিনতাই করা একটি সাউমি মোবাইল ফোন টাকার বিনিময়ে ফেরত দেয়ার সময় পিবিআই এর কাছে হাতেনাতে আটক হয়েছে সে। ওই চক্রকে আটক করতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
এদিকে ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। একইসাথে চক্রের অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি সরকারি এমএম কলেজের ক্যামিস্ট্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ও বিবর্তন কলেজ শাখার সভাপতি আনন্দ কুমার সরকারের কাছ থেকে কাঠেরপোল এলাকায় পুলিশ পরিচয় দিয়ে ছিনতাই করা হয়। ইয়াবা আছে কিনা চেক করার নামে মুখে থাপ্পড় মেরে (ব্ল বিভো জিরো ফাইভ ও স্যামস্যাং জেট-টু) দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া পলিটেকনিক কলেজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা থেকে কম্পিউটার বিভাগের ছাত্র সুমন মন্ডলের গতিরোধ করে দুটি ল্যাপটপ নিয়ে নেয় রিপন গাজী চক্র। শহরের পালবাড়ি মোড়ে পুলিশ পরিচয় দেয়া ওই চক্রটি হোটেল কর্মচারী সাকিলের গতিরোধ করে একটি সাওমি মোবাইল ফোন সেট ছিনতাই করে।
৩০ জানুয়ারি বেজপাড়া মেইন রোডের মাহফুজ আহমেদ প্রিন্স নামে যশোর সিটি কলেজের এক ছাত্র থানায় আরও একটি অভিযোগ করেন। তার কাছ থেকেও পুলিশ পরিচয়ে হু আই মোবাইল সেট নিয়ে যায় একই চক্র।
এরপর ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে যশোরে পুলিশ পরিচয়ে ফিল্মি স্টাইলে আবারও দুটি স্পট থেকে মোবাইল ছিনতাই করে সংঘবদ্ধ চক্র। যশোর আইটি পার্ক মোড় ও ডিসি বাংলো রোড থেকে ৩ কলেজ ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে কৌশলে ৩টি দামি মোবাইল সেট ছিনতাই করে। সরকারি এমএম কলেজের ছাত্র অর্ঘ্য মন্ডল আইটি পার্কের দিকে যাচ্ছিল। সে যশোর শহরের সুধীর বাবু কাঠ গোলা এলাকার আশোক মন্ডলের ছেলে। তার গতিরোধ করে ‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে? কু-মতলব আছে নাকি?’ এমন সব প্রশ্ন করে দাঁড় করায় পুলিশ পরিচয় দেয়া দুজন। তারা একটি লাল মটর সাইকেলে চেপে ছিল। মটরসাইকেলে বসেই বলে দেখি মোবাইল ফোনটা দেখি বলে ছিনিয়ে নিয়ে বলে থানায় দেখা করবি। এর কিছু সময় পরে যশোর ডিসি বাংলো রোডে কলেজ ছাত্র স্টেডিয়ামপাড়ার নাফিজ ইমরানকে দাঁড় করিয়ে একই স্টাইলে একটি ফোন ছিনতাই করা হয়। একই সময় যশোরের বাউলিয়া এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে শাহিন আলম রাব্বির গতিরোধ করে কাছে থাকা আরও একটি ফোন ছিনতাই করে ওই চক্রটি।
এসব অব্যাহত অভিযোগে ও পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই আতংকের কারণে মাঠে নামে থানা পুলিশ। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে চলা সংঘবদ্ধ চক্র ধরতে থানার ইন্সপেক্টর সামসুদ্দোহা নানামুখি কৌশলী অভিযান চালান। পুলিশ সেজে চলা ওই চক্রের কাউকে ধরিয়ে দিলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান। থানা পুলিশের সাথে জেলা গোয়েন্দা শাখা কাজ শুরু করলে চক্রটি গা ঢাকা দেয়। আবার ঈদের আগে ও পরে হঠাৎ করে যশোর শহর ও শহরতলীতে সেই আলোচিত চক্রটি আরটিআর মোটর সাইকেলটি নিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাঠ চষা শুরু করে।
গত ৮ জুন চক্রের দু’জন সেই আর আরটিআর নিয়ে বেনাপোলে চড়াও হয়। সেখানে যশোর থেকে বেড়াতে নতুনহাট কলেজের ছাত্র সাকিবুল ইসলাম, ফিরোজ হোসেন ও সাজুর গতিরোধ করে তাদের কাছ থেকে একটি সাওমি ও একটি হাউয়ায় মোবাইল ফোন একটি এফ জেট ২টি মটর সাইকেল ছিনতাই করে। ওই সময় নগদ নিয়ে মটর সাইকেলটি ফেরত দেয় চক্রটি। এরপর ফোন দুটি ফেরত দেয়ার জন্য টাকার দাবি করে। ১০ মে যশোর বিআরটিএর সামনে টাকা নিয়ে আসতে বলে। ভূক্তভোগী কলেজ ছাত্র সাকিবুলের বাবা সাজ্জাদুর রহমান টাকা নিয়ে বিআরটিএর সামনে যান। আর আগে থেকেই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অফিসারদের জানিয়ে রাখেন।
এদিকে বিকেলে যথাসময়েই চলে আসে ওই চক্রের গোদা। এসময় সে হাতেনাতে আটক হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অফিসারদের হাতে। সে সময় সে হম্বি তম্বি করে ডিবির ওসি পরিচয় দেয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। আটক হয় সে। পরিচয় মেলে, এই সেই রিপন গাজী যে এতদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুলিশ সেজে চলছিল। কলেজ ছাত্রদের টার্গেট করে ল্যাপটপ, মোবাইল, মটরসাইকেল ছিনতাই করছিল। চুল খাটো করে ছেটে পুলিশ অফিসার সেজে ছাত্রদের বোকা বানিয়ে চলছিল ঠাটেবাটে।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অসাধু চক্র সিরিজ ছিনতাই ঘটনা ঘটিয়েছে। আটক রিপন গাজীর সহযোগীদের হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রযুক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।