আজ - শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ৭:৫৩

রাজনৈতিক কোন্দলে অশান্ত হতে পারে না’গঞ্জ!

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে আবারো একে অন্যকে দোষারোপের রাজনীতি শুরু হয়েছে এমনটা মন্তব্য করে খোদ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মন্তব্য শান্ত নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার জন্য বিএনপি কিংবা জামাতের প্রয়োজন নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতা-নেত্রীরাই নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার জন্য যথেষ্ট। গত কয়েক দিন যাবতই আকারে ইঙ্গিতে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। আর একটি মহল শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর বিরোধকে পুঁজি করে আবারো নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করতে মাঠে নেমেছে। এক্ষেত্রে এ মহলটি আবারো সফল হতে চলেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মন্তব্য। গতকাল বুধবার বিকালে ত্বকী মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে সেলিনা হায়াত আইভী স্পষ্ট করেই ত্বকী হত্যার জন্য ওসমান পরিবারকে দায়ি করে খুনি পরিবার বলে মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হত্যাকান্ডের জন্য ওসমান পরিবারকে দায়ি করে বক্তব্য রেখেছেন। এর আগে শামীম ওসমান সেলিনা হায়ত আইভীর নাম উল্লেখ না করে বলেছিলেন, যারা দিনে আওয়ামীলীগ ও রাতের বেলায় জামাত-বিএনপির সাথে আতাঁত করে ক্ষমতায় আসে তাদের সাথে রাজনীতি করা চলে না। সাংসদ শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের আগেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামাতের আমীর মাওলানা মঈন উদ্দিনের পুলিশকে দেয়া অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়। সেই বক্তব্যে মাওলানা মঈন উদ্দিন দাবি করেন সেলিনা হায়াত আইভীকে বিজয়ী করার জন্যই জামাতের হাই কমান্ড সিটি নির্বাচনের ৮ ঘন্টা আগে বিএনপি প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে মেয়র প্রার্থী থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। মঈন উদ্দিনের দাবি আইভী নাকি বলেছিল সে নির্বাচিত হলে বিএনপিতে যোগ দিবে। ভাইরাল হওয়া এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সরকারি পক্ষ কিংবা মেয়র আইভীর পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ জানানো হয়নি। এদিকে গতকাল মেয়র আইভী পুনরায় ওসমান পরিবারকে  খুনি পরিবার আখ্যায়িত করে নারায়ণগঞ্জে হত্যা, অত্যচার ও অবিচারের জন্য ওসমান পরিবারের সদস্যদের দায়ি করলেও মেয়র আইভী তার বক্তব্যে শামীম ওসমান কিংবা সেলিম ওসমানের নাম উল্লেখ করেনি। পাশাপাশি সাগর-রুনি ও তনু হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, এসব হত্যাকান্ডের সাথে কারা জড়িত তা আমরা জনি। তনু হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না তাও সাধারণ মানুষ জানে বলে মেয়র আইভী মন্তব্য করেন। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সাথে ওসমান পরিবারকে জড়িত করে বক্তব্য দেওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে আবারো সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিতে শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, এভাবে তদন্তাধীন মামলা নিয়ে উপ-মন্ত্রীর পদ মর্যাদার মেয়র আইভীর বক্তব্য রাখা শোভনীয় হয়নি। তাছাড়া সাগর-রুনি ও তনু হত্যাকান্ডের মত স্পর্শকাতর দুইটি হত্যা মামলা নিয়ে মন্তব্য করে মেয়র আইভী সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। কারণ এই হত্যা মামলা দু’টি নিয়ে সরকার এমনিতে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। তার উপর ক্ষমতাসীন দলের উপ-মন্ত্রীর পদ মর্যাদার মেয়র আইভীর এ বক্তব্য বিরোধী দল সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। মেয়র আইভীর এ বক্তব্যে তার আশেপাশে থাকা আওয়ামী বিরোধীরা খুশি হলেও আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে শামীম ওসমান বিরোধীরাও মেয়র আইভীর এ বক্তব্যকে আত্মঘাতি বক্তব্য বলে মন্তব্য করে বলেছেন, শান্ত নারায়ণগঞ্জ আবারো অশান্ত করতে একটি মহল আবারো দশম নির্বাচনের পর দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে আবারো সেই অবস্থা শুরু হতে পারে। কারণ নব্য জেএমবির প্রধান সালেহীন এখনো অধরা। বন্দরে কৈশর-যৌবন কাটানো জঙ্গী সালেহীনের বহু অনুসারি নারায়নগঞ্জে রয়েছেন। তাছাড়া ভারতে গ্রেফতারকৃত জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান মাসুম ও জেএমবির নারী শাখার প্রধান মাসুমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বন্দরের ফরাজীকান্দার বাসিন্দা। ফাতেমাকে র‌্যাব গ্রেফতার করলেও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার আড়ালে নারায়ণগঞ্জে জেএমবির বহু সদস্য তৎপর রয়েছে বলে আইন শৃংখলা বাহিনী একাধিক বার স্বীকার করেছেন। অতএব নারায়ণগঞ্জের শান্তি শৃংখলার স্বার্থে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রীদের সংযত আচরণসহ বক্তব্য প্রদানে দায়িত্তশীল হওয়া প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করে।

আরো সংবাদ