আজ - শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ১:৩৯

শার্শায় ইজিবাইক চালক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন: আটক-৩

শার্শা থেকে উদ্ধার ইজিবাইক চালক সোলায়মান সাকিব (১৪) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর। হত্যার সাথে জড়িত দুইজন এবং চোরাই ইজিবাইক কেনার অভিযোগে আরো একজনসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাকিব ঝিকরগাছা উপজেলার পুরন্দপুর গ্রামের শাকিল হোসেনের ছেলে।

আটককৃতরা হলো, ঝিকরগাছার চান্দেরপোল গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন মোল্লার ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩০), বাঘারপাড়ার বারভাগ গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিন মোল্লার ছেলে মেহেদী হাসান মিলন (২২) এবং চৌগাছার মাড়–য়া গ্রামের রমজান আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম প্লাবন (৩০)। পিবিআই সাকিবের কাছ থেকে ছিনতাইকরা ইজিবাইকটি আটক প্লাবনের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে।

পিবিআই জানিয়েছে, পিতা-মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর নিহত সাকিব নানার বাড়ি শার্শা উপজেলার গোগা গ্রামের কারিগর পাড়ায় থাকতো এবং ৭ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। পাশাপশি ইজিবাইক চালাতো। গত ১৭ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে সাকিব তার নানার ইজিবাইক নিয়ে বাগআচঁড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর সে বাড়িতে ফেরেনি। পরদিন ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার উলশী ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের কুল বাগানের মধ্যে থেকে সাকিবের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় সাকিবের নানা আকবর আলী শার্শা থানায় একটি মামলা করলে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই মামলাটি হাতে নিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ১৯ জানুয়ারি ওই তিনজনকে আটক করে। এদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম প্লাবনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক চৌগাছা উপজেলার ছুৃটিপুর রোডের নুরুজ্জামান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মধ্য থেকে ছিনিয়ে নেয়া ইজিবাইকটি উদ্ধার করে।

পিবিআই জানিয়েছে, আটক তিনজনই ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির সদস্য। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে ইঞ্জিন চালিত ভ্যান, ইজিবাইক, রিকসা ছিনতাই ও চুরি করে তা বিক্রি করে দেয়। আটক মনিরুল ইসলাম বেশ কয়েকটি মামলার আসামি। ওই মামলা পরিচালনা করতে টাকার প্রয়োজন বলে মনিরুল তার সহযোগী মেহেদী হাসান মিলন ও জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে বার্মিজের সাথে পরামর্শ করে। বার্মিজ পলাতক রয়েছে।

তারা ঠিক করে ইজিবাইক ছিনতাই করতে হবে। তা বিক্রি করে টাকা পেয়ে মামলার খরচ যোগাতে হবে। সে অনুযায়ী ১৭ জানুয়ারি মিলন ও জাহাঙ্গীর হোসেন বার্মিজ বাগআচঁড়া বাজার থেকে সাকিবের ইজিবাইকটি এক হাজার টাকায় ভাড়া করে। তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরবে বলে জানায়। তারা বিকেলে এক ফাঁকে ঝিকরগাছার গদখালীতে আসে। সেখান মেয়েদের সাথে দেখা করবে বলে চালক সাকিবকে জানায়। গদখালীতে কাউকে না পেয়ে সাকিব ভাড়া মিটিয়ে ছেড়ে দিতে বলে। পরে তারা ফের শার্শার দিকে ফিরে যায়। এক ফাঁকে মিলন চালক সাকিবের মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করে মনিরুলকে ফোন দেয়। মনিরুল তাদের উলশী এলাকার বড়বাড়িয়া গ্রামে যেতে বলে। এরপর ইজিবাইক নিয়ে সেখানে আব্দুল রশিদের কুল বাগানে তারা দাঁড়ায়। সাকিবকে তারা কুল খেতে বলে। সাকিব একটি গাছ থেকে কুল পাড়ার সময় মনিরুল একটি গামছা দিয়ে তার গলাই ফাঁস লাগাতে যায়। সেসময় সাকিব বুঝতে পেরে দৌড় দেয়। সাকিবের পিছু ধাওয়া করে পেছন থেকে একটি রেঞ্জ দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে মনিরুল। সাথে সাথে সাকিব মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে মনির কানের ভেতর ঢুকিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে এবং ইজিবাইক নিয়ে চৌগাছায় চলে যায়। সেখানে প্লাবনের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে পিবিআই প্লাবনকে আটক করে ইজিবাইক উদ্ধার করে।

এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালালের আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে মেহেদী হাসান মিলন। ম্যাজিস্ট্রেট ওই জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেছেন।

আরো সংবাদ