আজ - শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সন্ধ্যা ৬:০৩

সাতক্ষীরায় সংক্রমণ কমেনি, চলছে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন

সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় সপ্তাহের লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। তবে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি।

হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে এসব হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।

রোববার (১৩ জুন) সকালে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমনের হার ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ উঠানামা করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৬৪ দশমিক ২০ শতাংশ।

কুদরত-ই-খুদা বলেন- এ নিয়ে জেলায় আজ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ২৫৬ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৫ জন মারা গেছেন। জেলায় করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৫০ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অন্তত ২৪৪ জন।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধির মধ্যেও সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সীমিত সংখ্যক জনবলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।

সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার অপর্ণা রাণী পাল বলেন, জেলায় অস্বাভাবিক হারে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সীমিত জনবলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, তাদের ওখানে ১৬৫ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৫০ জন।

অপর্ণা রাণী পাল বলেন, বর্তমানে ডিউটি করছেন ৯৫ জন। এর মধ্যে ৯ জন আবার করোনা পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অচিরেই নার্স নিয়োগ না দিলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সাতক্ষীরার সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, জেলায় যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে ভাইরাসটির পরীক্ষার জন্য জেলায় ব্যাপক হারে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, একই চিকিৎসক ও নার্স একদিকে যেমন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, আবার তারাই সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা দিচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরোও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ন অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, শুধু শহরের মনুষকে সচেতন করলে হবে না। গ্রামের মানুষকে বেশি বেশি সচেতন করাতে হবে। এলাকায় এলাকায় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার আহবান জানান এই নাগরিক নেতা।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার বলেন, জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ৬৪৭ জন। এর মধ্যে ৫৭ জন দুটি সরকারি হাসপাতালে ও ৫৯০ জন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩১ জন। এ মধ্যে অনেকেই আছেন অসুস্থ্য। অচিরেই চিকিৎসক নিয়োগ না দিলে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে তিনি আরো জানান।
তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, করোনা রুগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রুগীদের জন্য বেডের সংখ্যা ৮৭ থেকে বাড়াতে বাড়াতে ১৩৫ টি করলেও এতে সংকুলান হচ্ছেনা। ফলে আরো ১৫টি বেড বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এই তত্ত্বাবধায়ক।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

বিজিবি সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল-মাহমুদ বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে, যাতে ভারতে অবৈধভাবে কেউ যাতায়াত করতে না পারেন।  করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সীমান্তে বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় সপ্তাহের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে প্রশাসন। জরুরি সেবা ব্যতিত সব দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরার সাথে যশোর ও খুলনাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের পয়েন্ট গুলিতে পুলিশ চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম মোস্তফা কামাল জানান, লকডাউনের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বিভিন্ন অপরাধে জেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।

জেলা প্রশাসক বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১২টি অভিযান পরিচালনা করে ৭১টি মামলায় ৭৬ হাজার দুইশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

আরো সংবাদ