আজ - বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ১০:২৮

সেফাত উল্লাহ সত্যিই মানসিক রোগী?

‘আমি বিশ্ববিখ্যাত, সেলেব্রিটি, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক, হলিউড অভিনেতা। আমি প্রেম সম্রাট সেফায়েত উল্লাহ। কী! হিংসে হয়? আমার মতো হতে চাও?’ মদ খাও

ফেসবুক লাইভে এসে এভাবেই কথা বলেন সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে সবচেয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত ব্যক্তি তিনি।

মাঝেমধ্যেই তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন। এতে তিনি অদ্ভুত, অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন। নিজেকে মুক্তমনা, কবি, সাহিত্যিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অভিনেতা, জাতিসংঘের প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন। নিজেকে একজন সম্ভ্রান্ত এবং ধনী ব্যক্তি হিসেবেও পরিচয় দেন। অপরদিকে বাংলাদেশের জনগণকে গরিব, অশিক্ষিত, মুর্খ এবং ছোটলোক বলে সম্বোধন করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই গালিগালাজকে তিনি নাম দিয়েছন, ‘শব্দ বোমা’। লাইভে বাংলাদেশের জনগণকে তিনি মদ খাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, মদ না খেলে বাঙালি কখনও মানুষ হবে না।

জানা গেছে, সেফাত উল্লাহর বাড়ি চাঁদপুরে। একটি লাইভে তিনি দাবি করেন, সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫৩ সালে। সেই হিসেবে তার বয়স ৬৫ বছর। তবে তার প্রকৃত বয়স এর চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন তিনি। সেফাতউল্লাহ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বলেও জানা যায়। বর্তমানে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে বাস করছেন।

সেফাত উল্লাহর স্ত্রী জানান, ২৮ বছর আগে দেশ ছাড়েন তিনি। তারপর থেকেই পরিবার থেকে তিনি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। পরিবারের দাবি, বর্তমানে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত। আর তার এমন কর্মকাণ্ডে পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন বিব্রত।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে সেফাত উল্লাহ’র স্ত্রী বলেন, ‘সবাই, আত্মীয়-স্বজনের কাছে আমাদের মুখ নাই। কেমন লাগতেছে আমরা জানি। এখন এগুলো কি বন্ধ করার কোনো পথ নাই? ইউটিউব কি এগুলো কোনো প্রতিকার করতে পারে না? আর উনি তো সিজোফ্রেনিয়া রোগী।’

অস্ট্রিয়া প্রবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে বসবাসের জন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই সেফাত উল্লাহর।

অস্ট্রিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদের বরাতে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভিয়েনা বাংলাদেশ কমিউনিটির এক পারিবারিক বিবাদে জড়িয়ে আদালতের রায়ে দীর্ঘদিন জেল খাটেন সেফাত উল্লাহ। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর অস্ট্রিয়ার আইন অনুযায়ী তার সেখানে  লিগ্যাল হবার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এসময় ব্যাপকভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেফাতউল্লাহ।

তবে সেফাতউল্লাহ আসলে মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা সে বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। ভিয়েনাতে তিনি চাকরি করছেন। তিনি যদি আসলেই সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হন তাহলে কীভাবে চাকরি সামলাচ্ছেন? তিনি একাই একটি বড় বাসায় থাকেন। পরিপাটি হয়ে অফিসে যান। অনেকেই দাবি করছেন, অতিরিক্ত মদ পানের জন্যই এমন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন তিনি। তার প্রচুর মদ পানের প্রমাণ মেলে ফেসবুক লাইভে। প্রায়ই লাইভে তাকে মদ পান করতে দেখা যায়।

সম্প্রতি আসাদ পংপং নামে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশি ফেসবুকে বেপরোয়া ও অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোয় তাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী জানান, বিদেশে বসে যারা দেশ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন সৃষ্টি করলে, সে বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, অন্যদেরকেও আমরা চিহ্নিত করছি যেখানেই থাকুন না কেন।’

আরো সংবাদ