খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক: ৮০ র দশকে এক তরুণ সংবাদকর্মী ফোন করলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে। ওপাশ থেকে ভারি গলায় আওয়াজ এলো ‘কাকে চাই।’ সংবাদ কর্মী ‘ছেলে কণ্ঠ’ পেয়ে একটু ভড়কেই গেল। তারপরও ভয়ে ভয়ে বললেন, ‘সাজেদা চৌধুরী আছেন।’ ওপাশ থেকে উত্তর এলো, ‘বলছি।’ সংবাদকর্মী প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ফোনটা রেখে দিলেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের দু:সময়ে কাণ্ডারী। দু:সময়ে যিনি তাঁর পুরুষালি কণ্ঠের শ্লোগানে আওয়ামী লীগকে পুণরুজ্জীবিত করেছিলেন। যিনি অনেক চড়াই-উৎরাই এর মধ্যেও আওয়ামী লীগের নৌকার বৈঠা ধরে আছেন। কখনো দলের সঙ্গে, আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। দলের মধ্যে সবাই তাঁকে ডাকে ‘ফুফু বলে। এক সময় তাঁর গর্জনে ভয় পেতো না, এমন কর্মী পাওয়া যেতো না। এখন আশি উর্ধ্ব এই শ্রদ্ধেয় রাজনীতির মানুষটা নিয়ত অসুখের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। কিন্তু একটু সুস্থতায় বার বার তাঁর উৎকণ্ঠা, ‘হাসু ঠিক আছে তো। ওর কোনো সমস্যা নাই তো?’
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে কোন পরিচয় অমরত্ব দেবে। তিনি দীর্ঘ সময় জাতীয় সংসদের উপনেতা, এই পরিচয়? তিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ছিলেন সেই পরিচয়? ১১ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, সেটি? ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর তিনি এবং জোহরা তাজউদ্দিন মিলে আওয়ামী লীগকে নতুন করে তুলেছেন সেটি? নাকি, দলের নানা মত পথের মধ্যেও কন্যাতুল্য শেখ হাসিনার প্রতি নি:শর্ত আনুগত্য রেখেছেন সেটি? কোন পরিচয়ে তিনি মহিমান্বিত হবেন, সে বিচার করবে ইতিহাস। কিন্তু সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর একটি বৈশিষ্ট্য কাছের মানুষরা দেখেছেন অদ্ভুত মুগ্ধতায়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কোনোদিন এক সেকেন্ডের জন্য হলেও, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিচ্যুত হননি।
৮১ সালে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অনেক সিনিয়র নেতা ‘বয়সে ছোট’ এই বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিকে সম্মান দেখাতে কার্পন্য করতো। এ সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ‘নেত্রী’ ডাকা শুরু করেন। নেত্রী তাঁকে ফুফু ডাকলেও প্রকাশ্যে নেত্রীকে নেতার মর্যাদা দেওয়ার চর্চা শুরু করেন তিনি। শেখ হাসিনা সভাপতি, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক-আওয়ামী লীগকে টিপ্পনী দিয়ে অনেকে, মলিহা আওয়ামী লীগ বলতো। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতরাকে থোরাই কেয়ার করে কঠিন সময়ে নেত্রীর পাশে ছিলেন নির্ভরতা হয়ে। এমনকি ওয়ান-ইলেভেনের কঠিন সময়েও শেখ হাসিনার পাশেই ছিলেন। দলের মধ্যে যখন পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশেই ব্যস্ত অনেকে তখন, এই প্রবীণ মানুষটি চান, শেখ হাসিনা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। কথার খেই হারিয়ে ফেলেন, আগের সেই তেজও নেই। কিন্তু শেখ হাসিনার কথা উঠলেই, গলায় সেই পুরোনো দৃঢ়তা ফিরে আসে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির চেয়ে আওয়ামী লীগের ফুফু পরিচয়ই তাঁকে গর্বিত করে।