বিশেষ প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ইন্সপেক্টর মো. হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়ে না পেয়ে মৃত ব্যক্তি ও দেশের বাইরে থাকা লোককে সাক্ষী করে একটি হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আরও ২৪ জন সাক্ষী আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, তারা কোনো সাক্ষ্য না দিলেও তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছেন তদন্তকারী ওই কর্মকর্তা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে রোববার (৮ সেপ্টেম্বরে) দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন আল আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি, নবীনগরের বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ভূইয়া। তিনি জানান, ডিআইজিসহ সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই টাকা দাবি করেন। এছাড়াও দুই দফায় ঘুষ বাবদ পিবিআই এর ওই কর্মকর্তা ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা মোট ৩৯ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। এরমধ্যে বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফ (৭৩) অন্যতম। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর আবদুর রউফ মারা গেলেও সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দী নেয়ার তারিখ দেখানো হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। অর্থাৎ তার মৃত্যুর ২ মাস ২৯ দিন পর তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ৯ দফা দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
আরেকজন মেরাকুটা গ্রামের অজন্ত কুমার ভদ্র (৬৬)। তার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু তিনি বৈধ পাসপোর্টে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ভারত যান। সেখান থেকে দেশে ফেরেন ৮ ফেব্রুয়ারি। আরও ২৪ জন সাক্ষী আদালতে এফিডেভিট জমা দিয়েছেন এই বলে যে, তারা পিবিআই’র ওই কর্মকর্তার কাছে কোনোরকম সাক্ষীই দেননি।
নবীনগরের শিবপুর ইউনিয়নের বাঘাউড়া গ্রামে ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে আল আমিন (২২) খুন হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কসবার খাড়েরা ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাদী হয়ে নবীনগর থানায় ১০ জনকে এজাহারনামীয় এবং ২-৩ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় পার্শ্ববর্তী সেমন্তঘর গ্রামের আবদুল হান্নান ভূইয়া, তার ছেলে পলাশ (ইফতেখার মাহমুদ)সহ মোট ৫ জনকে আসামি করা হয়। হত্যা মামলাটির সর্বশেষ তদন্ত করে পিবিআই।
এর আগে সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এই দুটি সংস্থার তদন্তেই প্রকাশ পায় আবদুল হান্নান ভূইয়ার সঙ্গে আল আমিনের ভগ্নীপতি জাকির হোসেনের জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধ রয়েছে। আবদুল হান্নানকে শায়েস্তা করতে নিজের শ্যালককে হত্যা করে জাকির হোসেন। এরপর আবদুল হান্নান ও তার ছেলেসহ ১০ জনকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন তিনি।
দুটি সংস্থার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার আগের দিন ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের স্ত্রী ইতির নানির বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় আল আমিনের ভগ্নীপতি জাকির ও তার সহযোগী শাওন, বিল্লাল ও মোবারক। খাওয়ার পর জাকির ইতিকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুটি সিঙ্গারা খেতে দিয়ে আল আমিনকে নিয়ে পাশের বাড়িতে নাছির ফকিরের মাহফিলে চলে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে হত্যা করে। এরপর মরদেহ গ্রামের একজনের বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।
দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং সাক্ষীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশ জাকির হোসেন (৩৮), তার সহযোগী বিল্লাল (৩৭), শাওন ওরফে রানা (৪২) ও মোবারক মিয়া (৩৬) এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগপত্র দেয়।
অন্যদিকে পিবিআই এই ৪ জনকে নির্দোষ বলে তাদের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এমনকি সিআইডি’র প্রথম দিকের তদন্তে ঘটনায় জড়িত বলে যে ৬ জনের নাম প্রকাশ পায় তাদেরকে সাক্ষী বানিয়ে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।
সাংবাদিক সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন আবদুল হান্নান ভূইয়া।