আজ - বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৯:২৬

গেইল-ম্যাককালামের চিন্তায় ঘুমই হয়নি মেহেদীর!

স্পোর্টস ডেস্ক: মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের বেশির ভাগ ম্যাচেই গ্যালারির অর্ধেক খালিই পড়ে থাকে। কিন্তু গতকালের ছবিটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। রংপুর রাইডার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ম্যাচে আক্ষরিক অর্থেই গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না!

হঠাৎ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি টইটম্বুর হয়ে ওঠার কারণটা নিশ্চয়ই অজানা নয় কারোর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান—ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর ক্রিস গেইল একসঙ্গে ব্যাটিংয়ে নামবেন, এই দৃশ্য মিস করলে চলে! কিন্তু যাঁদের দেখতে মানুষের এত আগ্রহ, তাঁদেরই কিনা স্পিন-জালে আটকে রাখলেন ২২ বছর বয়সী এক অফ স্পিনার। ক্রিস গেইল-ব্রেন্ডন ম্যাককালামদের ছাপিয়ে ম্যাচের নায়ক ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মেহেদী হাসান। অথচ এই গেইল-ম্যাককালামের চিন্তায় নাকি আগের রাতে ঘুমই হয়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তরুণ অলরাউন্ডারের!

ঘরোয়া ক্রিকেটে মেহেদী পরিচিত মুখ। যদিও অন্য দুই ‘মেহেদী’, মানে মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা মেহেদী মারুফের মতো অতটা আলোচিত নন। জাতীয় লিগে নিয়মিত খুলনার হয়ে তিন-চারে ব্যাটিং করেন। বোলিংটা করেন খণ্ডকালীন অফ স্পিনার হিসেবে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অবশ্য ভূমিকা বদলে যায় অনেকটাই। ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। গত বিপিএলে বরিশাল বুলসের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল। বোলিং-ব্যাটিং কোনোটিরই তেমন সুযোগ মেলেনি।

সেই মেহেদীকেই কাল ফাটকা হিসেবে কাজে লাগালেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ১৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা রংপুরের দুই ওপেনার গেইল-ম্যাককালামের সামনে ছেড়ে দিলেন তরুণ স্পিনারকে। প্রথম স্পেলে ২ ওভার বোলিং করে মেহেদী কোনো উইকেট না পেলেও রংপুরের দুই তারকা ওপেনার তুলতে মারলেন মাত্র ২ রান! ষষ্ঠ ওভারে আবারও বোলিংয়ে এসে পেয়ে গেলেন ম্যাককালাম আর শাহরিয়ার নাফীসের উইকেট দুটি। ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে পেলেন ২ উইকেট—ম্যাচের নায়ক হতে আর কী লাগে!

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আগেও কথা বলেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন বলতে যা বোঝায়, সেটিতে কালই প্রথম এলেন মেহেদী। এভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসাটা যদিও তাঁর তেমন কঠিন মনে হয়নি, ‘মাঠের কাজটাই সবচেয়ে কঠিন। মাঠে ভালোভাবে খেলতে পারলে এটাও করতে পারব ভালোভাবে।’

মেহেদী ম্যাচটা খেলতে পারবেন, এটা জেনেছেন দুদিন আগে। গেইল-ম্যাককালামকে আটকানোর ছক কষতে গিয়ে নাকি তাঁর নির্ঘুম রাত কেটেছে! অদ্ভুত সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তরুণ এই অলরাউন্ডারের মুখভরা হাসি, ‘আমার ঘুম আসছিল না। অনেক দিন পর ম্যাচ…সেটিও আবার গেইল-ম্যাককালাম সামনে। রাতে তাদের ভিডিও দেখছিলাম। দেখি ওদের দুর্বল জায়গাই নেই! শুধু চার-ছক্কা মারে! সকালে (কাল) কোচকে এটা বলছিলাম। তখন কোচ বললেন, তাহলে তোর খেলার দরকার নেই! বললাম, না স্যার, আমি পারব।’

মেহেদী কেবল পারেনইনি, দুর্দান্ত করেছেন! রান কম দিয়ে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখাই ছিল মেহেদীর লক্ষ্য। সেটি তিনি ভালোভাবেই পেরেছেন। ‘বোনাস’ হিসেবে পেয়েছেন ২ উইকেট। ম্যাককালামের উইকেটটি পেয়ে অনেক খুশি। তবে মেহেদীর আনন্দের ষোলোকলা পূর্ণ হতো যদি গেইলেরটাও পেতেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমি উইকেটের আশা করিনি। ৪ ওভারে ২০ রান দিলেই খুশি। সেখানে দুটি উইকেট পেয়েছি। ম্যাককালামের উইকেট পেয়েছি। গেইলেরটা পেলেও খুশি হতাম। লক্ষ্য তো ছিল দুটিই নেব!’

সেটি না হলেও আসল লক্ষ্য তো পূরণ হয়েছে। দলও জিতেছে। আর এবার বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই চিনিয়েছেন নিজেকে। তাও আবার গেইল-ম্যাককালামকে বোতলবন্দী করে!

আরো সংবাদ