বই উৎসবের পর তিন দিন চলে গেছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় সাতটি বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিনা মূল্যের পাঠ্যবই পায়নি। টাকা না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই বই বিনা মূল্যের। কিন্তু বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়া বই দিচ্ছে না। নানা খাত দেখিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন কোনো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ৫০ শতাংশ বই বিতরণ করেনি। এরপর থেকে একেক বিদ্যালয় একেক কথা বলে শিক্ষার্থীর ওপর নির্ধারিত অঙ্কের টাকা চাপিয়ে দিচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থী টাকা দিচ্ছে, তারাই শুধু বই পাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে এসব অরাজকতা চললেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার নারকেলী উচ্চবিদ্যালয়, কামালখান হাট উচ্চবিদ্যালয়, হাজীপুর উচ্চবিদ্যালয় ও সোনার বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে বই নেওয়ার জন্য বহু শিক্ষার্থী অপেক্ষা করছে। অনেকে নির্ধারিত টাকা দিয়ে বই নিয়ে যাচ্ছে।
নারকেলী উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। টাকা দেয়নি বলে অনেক শিক্ষার্থী তখনো বই পায়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘বইয়ের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ৫০০ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হলে, বই কীভাবে দেব! যারা টাকা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে, তারাই বই নিয়ে যাচ্ছে।’
কামালখান হাট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, তাদের বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি। বই নিতে হলে ৪০০ টাকা করে দিতে হবে। আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী একই অভিযোগ করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক চাঁদা ৪০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। ওই টাকা ব্যবস্থাপনা কমিটি রেজল্যুশনের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছে। এখানে আমার কিছু করার নাই। টাকার জন্য বই দেওয়া হচ্ছে না, এ অভিযোগ ঠিক নয়।’
এ ছাড়া আলীম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, চরপাড়া এস এম দাখিল মাদ্রাসা, মেষ্টা উচ্চবিদ্যালয়েও টাকা নিয়ে বই বিতরণের অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছরের প্রথম দিন বই বিতরণের একটি নির্দেশনা প্রতিটি বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই দিন উপস্থিত সব শিক্ষার্থীর মাঝেই নতুন বই বিতরণের কথা। তবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি। টাকার জন্য শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।